পাঠ্যবই মুদ্রণে এনসিটিবির দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য

সম্পাদকীয়

নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যূন সোয়া ৩৩ কোটি পাঠ্যবই মুদ্রণের কথা রয়েছে। অথচ নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র তিন মাস বাকি থাকলেও এসব বই মুদ্রণ শুরু তো দূরের কথা, এ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও চুক্তি সম্পাদন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ পরিস্থিতিতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক হাতে পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার পাঠ্যবই নিয়ে সৃষ্ট ‘হযবরল’ অবস্থা তৈরির পেছনে রয়েছে তিনটি কারণ।

প্রথমত, বিলম্বে শুরুর কারণে পাঠ্যপুস্তকসংক্রান্ত ছয়টি দরপত্রের মধ্যে একটির প্রক্রিয়াও এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি এনসিটিবি। এ কারণে বই মুদ্রণের জন্য চুক্তিও করা যায়নি। দ্বিতীয়ত, নতুন শিক্ষাক্রমে আগামী বছর চারটি শ্রেণিতে বই দেয়ার কথা। বিলম্বের কারণে প্রাথমিকের পাইলটিং (পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) করা যায়নি। অবশ্য মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিং কোনোমতে সম্পন্ন হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত বই চূড়ান্ত হয়নি। তৃতীয়ত, ডলার, জ্বালানি তেল ও কাগজসহ বই মুদ্রণের অপরিহার্য উপাদানের দাম বৃদ্ধিসহ বিদ্যুতের বিদ্যমান পরিস্থিতিও সংকটের শঙ্কা তৈরি করেছে।

পাঠ্যবই নিয়ে এবার যে অবস্থা তৈরি হয়েছে এর দায় পুরোপুরি এনসিটিবির, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাধারণত পাঠ্যবই নিয়ে বছরের শেষদিকে সংকট দেখা দেয়। অথচ এবার প্রস্তুতি পর্বেই জটিলতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যা অনাকাক্সিক্ষত। নতুন বছরের বই মুদ্রণে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। নতুন বই হাতে নতুন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অভিষেক ঘটবে-এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু প্রতিবছরই এ নিয়ে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এবারও যাতে সেই একই বাস্তবতার মুখোমুখি না হতে হয়, সেজন্য বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

সময়মতো বই না পেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া ইতঃপূর্বে দেখা গেছে, প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকগুলোর কোনোটির একটি অধ্যায়ের অর্ধেক নেই, আবার কোনোটির এক পৃষ্ঠার সঙ্গে অপর পৃষ্ঠার কোনো মিল নেই। ভুলে ভরা এসব পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অতীতে বহুবার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। বস্তুত সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবেই পাঠ্যপুস্তক থেকে ভুল ও নানা অসংগতি দূর হচ্ছে না। ভুলে গেলে চলবে না, শিক্ষার অপরিহার্য উপকরণ বই। সরকার স্কুল পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহ করছে। শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই তুলে দেয়ার দায়িত্ব যেহেতু এনসিটিবির হাতে ন্যস্ত, তাই এ বিষয়ে এনসিটিবি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, এটাই কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More