প্রকাশনা উৎসবের আবির এবারও হৃদয়েই

হাঁটি হাঁটি পা পা করে দৈনিক মাথাভাঙ্গা আজ প্রকাশনার ৩১ বছরে। আড়াই যুগের পথ মাড়িয়ে আরও অনেক অনেক দূর পৌঁছুনোর প্রত্যাশা নিয়ে আজকের শুভক্ষণে সকলকে সৃষ্টি সুখের উল্লাসমাখা শুভেচ্ছা। যদিও বিশ্বজুড়ে মহামারীর মধ্যে উৎসবের উজ্জ্বলতায় ভাটা। অচেনা কষ্টের রুদ্ধশ্বাস শঙ্কিত করে রেখেছে সকলকে। গত বছরের আজকের দিনে প্রত্যাশা ছিলো, মহামারীকে হার মানিয়ে মানুষ মুক্ত বাতাসে স্বস্তির শ্বাস নেবে শিগগির। কিন্তু তা তো এখনও অধরা। আরও কতজনকে হারাতে হবে, কতোটা কষ্টের সময় পেরোতে হবে আমাদের? অজানা হলেও ভবিষ্যত বিনির্মাণে বিশ্বজুড়েই চলছে তোড়জোড়। নিশ্চয় সুদিন সামনে। ততোদিন এবং তারপরও সকলের সুস্বাস্থ্য কাম্য। সুস্থতা সত্যিই মহান স্রষ্টার শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত।
১৯৯১ এর ১০ জুন দৈনিক মাথাভাঙ্গার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সমাজ থেকে মৌলবাদ, কুসংস্কার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, হিংসা বিদ্বেষ দূর করার প্রত্যয়ে পথ চলার মাঝে কতটা সফলতা, কতটা বিফলতা তার বিচার অবশ্যই পাঠককূলই করেছে, করছে, করবে। পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপন দাতাসহ সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছাড়া ছোট্ট জেলা থেকে আত্মপ্রকাশ পাওয়া কোনো পত্রিকার আঞ্চলিকতায় উন্নীত হওয়া কি সম্ভব? অবশ্যই না। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার প্রতিদিন পাঠকের কাঠগড়ায় নিজেদের পক্ষে রায় নেয়ার চেষ্টায় যেমন ব্রত, তেমনই পাঠককূলও ভুলত্রুটি শুধরে চলার পথকে করেছে মসৃণ। বহু চড়াই উৎরাই ঘোরাটোপ পেরিয়ে প্রকাশনার ৩১ বছরে পদার্পণের কৃতিত্বের প্রায় সবটুকুই পাঠককূলের। অবশ্য পাঠকের প্রত্যাশা পূরণের জন্যই মাথাভাঙ্গা পরিবারের সকল যোদ্ধার অবিরাম চেষ্টা করা। আজকের সফলতাকে আগামীদিনে টপকানোর প্রত্যয় রয়েছে বলেই মাথাভাঙ্গা একের পর এক রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ প্রচেষ্টার পথে হারাতে হয়েছে বেশ ক’জন যোদ্ধাকে। প্রধান সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম পিনু, সদরুল নিপুল, হাফিজ উদ্দীন মাস্টার, সাঈদুল্লাহ আল সাহেদ, ইলিয়াস হোসেন ইলু, আবু দাউদসহ অনেকেই চলে গেছেন আমাদের মাঝ থেকে। বহু পাঠকও গত হয়েছেন কালক্রমে। আজকের এইদিনে সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা।
দৈনিক মাথাভাঙ্গা’র প্রথমে সিসার অক্ষরে ছেপে পাঠকের সামনে পৌঁছুতো। পর্যায়ক্রমে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক ছাপাযন্ত্রে সজ্জিত হয়। রঙিনও হয়েছে, করোনা ভাইরাস মহামারী থমকে দিয়েছে সেই উদ্যোগ। ছাপার উপকরণের মূল্য যেমন আকাশচুম্বি হয়েছে, তেমনই বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের খাতে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। সংকট শুধু স্বাস্থ্যকর বাতাসেরই নয়, তহবিলেও পড়েছে তার প্রভাব। তারপরও দৃঢ়প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও সামর্থ্য মাথাভাঙ্গা পরিবারের রয়েছে। ওয়েবসাইট সংস্করণ দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। মূদ্রণে আবারও রঙিনে ফেরার প্রস্তুতি রয়েছে। ছাপা উপকরণের মূল্য নিয়ন্ত্রণে এলেই মাথাভাঙ্গা হাজির হবে ৪ রঙে সজ্জিত হয়ে। শুধু রঙ নয়, পাঠককূলের চাওয়া পাওয়া পূরণে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার ইচ্ছেতেও কমতি নেই। চরম সংকটময় সময় পার করতে হচ্ছে বলেই প্রত্যাশায় অপূর্ণতার অভিযোগ মাথাভাঙ্গা পরিবার অস্বীকার করছে না। যা সত্যি তা মাথাভাঙ্গা পরিবার অকপটে প্রকাশ করে বলেই তো ঠোঁটকাটা উপাধি নিয়ে অগ্রযাত্রার কাতারে শামিল সকলে। তাঁবেদারি নেই, নেই তোষামোদের বালাই। বস্তুনিষ্ঠতায় যে পরিবার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাকে কি কোনো দলীয় সংকীর্ণতায় আবদ্ধ হওয়া মানায়? যেটুকু সীমাবদ্ধতা তা বৈশি^ক মহামারীর কারণেই। আর বেশি দেরি নেই। টিকা এসেছে। কেটেছে ভীতি। শতভাগ টিকাকরণের মধ্যদিয়ে নিরাপদ হোক বিশ^।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের আঙিনায় বসে দেখা স্বপ্ন’র নাম দৈনিক মাথাভাঙ্গা। স্বপ্নের বীজ বপনকারীদের স্বপ্ন আজ প্রকাশনার ৩১ বছরে। গর্বিত সকলে। অগ্রযাত্রায় পাঠক, সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সহযোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখার আকুতি আজন্মের। পত্রিকা প্রকাশে অসংখ্য যোদ্ধার অক্লান্ত পরিশ্রম যেমন থাকে, তেমনই পাঠকের হাতে পৌঁছুতেও বিতরণকারীদের ঝরাতে হয় ঘাম। পাঠকের ভালোবাসা রয়েছে বলেই বিন্দু বিন্দু ঘাম মাথাভাঙ্গা পরিবারের কাছে হয়ে ওঠে মূল্যবান মুক্ত। গচ্ছিত নন্দিত নান্দাভরা প্রকাশনা উৎসবের আবির এবারও হৃদয়েই থাক, আগামীতে নিশ্চয় রকমারি আয়োজনে ভেতরে-বাইরে রাঙিয়ে নেয়া যাবে। এ আশায় আবারও সালাম ও শুভেচ্ছা। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More