প্রতারণার ধরন বদলালেও ওদের সূত্র একই

সম্পাদকীয়
প্রতারণার প্রধান অস্ত্রের নাম লোভ, দ্বিতীয় অস্ত্র বিশ^াস স্থাপনের মতো ছলনা। একটু সতর্ক হলে প্রতারকচক্র খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। সমাজের মানুষ সরলসোজা। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় প্রতারকচক্র। লাভের কথা বলে অর্থলগ্নি নিয়ে লাপাত্তাই শুধু হচ্ছে না, প্রায় অর্ধেক দামে নতুন নামী দামি কোম্পানির মোটরবাইক দেয়ার কথা বলেও অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। সর্বরোগের ওষুধ বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা তো রয়েছেই।
সময়ের স্রোতে প্রতারণার ধরন বদলালেও ওদের সূত্র যে সেই ‘লোভের টোপ’ তা বলাই বাহুল্য। লোভনীয় প্রস্তাব দিলেই তো আর শিকার ধরা যায় না, বিশ^াস স্থাপনের জন্য চার দিতে হয়। চলমান সময়ের প্রতারকচক্র লোভনীয় টোপের পাশাপাশি বিশ^াস স্থাপনের মতো চার ফেলতেও সিদ্ধহস্ত। বিশেষ করে অনলাইন নির্ভর কিছু গোষ্ঠী বা প্রতারকচক্রের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ধরণ দেখে চতুররাই বিশ^াস অবিশ^াসের দোলাচালে পড়ছে। অর্থলগ্নিও করছে। কেন? কারণ, প্রথম দিকে যারা অর্ধেক টাকায় দ্বিগুন মূল্যের পণ্য বা মোটরসাইকেল পেয়ে যাচ্ছে তাদের দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রতারকচক্র যখন অর্থপ্রাপ্তির লক্ষ্যে পৌঁছে যচ্ছে তখনই লাপাত্তা হচ্ছে। আর সহজ শর্তে ঋণ ও অল্প লগ্নিতে অনেক টাকা পাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি লাপাত্তা হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া পুরোনো দিনের কয়েন কিম্বা বিলুপ্ত প্রায় প্রাণি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে প্রতারকরা দীর্ঘদিন ধরেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জিনের বাদশা সেজে, কোনো কোনো কোম্পানির প্রতিনিধি হয়ে সেলফোনে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি রয়েছে। এসবের শিকার হয়ে অনেকেই সর্বশান্ত হচ্ছেন। পথে বসছেন।
গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় মেহেরপুরের গাংনী এলাকা থেকে একটি চক্র কীভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ে পালিয়েছে তার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর ক’দিন আগে প্রকাশিত হয় চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দামুড়হুদা এলাকা থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়া একটি চক্রের প্রতিবেদন। তার আগে পত্রস্থ হয় পুরোনো কয়েন নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তিনজনের গ্রেফতার হওয়ার খবর। প্রতারণা ও প্রতারিত হওয়ার খবর গুরুত্বসহকারেই পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরও প্রতারিতের সংখ্যা কি কমছে? সঙ্গত এ প্রশ্নের জবাব যাই হোক, প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা তখনই বাড়ে যখন তারা প্রতারণার অনুকূল পরিবেশ পায় এবং তাদের টোপে প্রত্যাশিত সাড়া পায় তখন। অনুকূল পরিবেশ মানেই দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা। প্রতারণার ফাঁদ হঠাৎ পেতে দু একজনের অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়, গণহারে অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায় না। প্রতারণার ফাঁদে অনেকের ফেলতে হলে বেশ কিছুটা সময় লাগে। দীর্ঘ সময় নিয়ে যখন প্রতারণা করে তখনও কেনো তাদের ধরে আইনে সোপর্দ করা সম্ভব হয় না? কর্তব্যপরায়ণতায় গাফিলতি নাকি প্রতারকচক্রের অভিনব ফাঁদের বিষয়টি বুঝতে পারে না?
প্রতারকরা সবসময়ই প্রতারণার ফাঁদে আনে অভিনবত্বের ছোঁয়া। বিশ^াস স্থাপনের জন্য প্রথম দিকে কিছুটা গচ্চাও দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিকারের সংখ্যা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পাওয়ার পরই ওরা লাপাত্তা হয়। কখন হবে বোঝা মুশকিল। ফলে লোভের টোপের দিকে না এগোনাই বুদ্ধিমানের কাজ। লোভ পরিহার করতে পারলে যেমন প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব, তেমনই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ পারে প্রতারকমুক্ত সমাজ গড়তে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More