প্রস্তাবিত বাজেট যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

সম্পাদকীয়

করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়েছিলো পুরো বিশ্ব। দেশেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে নানা ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং জনজীবনে নেমে এসেছিল সামগ্রিকভাবে অনিশ্চয়তা। আর তা যখন মোকাবেলা করে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠছে বিশ্ব, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব হিসাব ওলট-পালট করে দিয়েছে। সংকটে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। আর কঠিন এই বাস্তবতায় বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের ১৪তম অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার চতুর্থ বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪তম বাজেট এটি যা দেশের ইতিহাসে একক কোনো দলের টানা ১৪ বার বাজেট দেয়ার রেকর্ড।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেট বক্তৃতার প্রধান শিরোনাম দিয়েছেন ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। তিনি বাজেটে মূল লক্ষ্য নিয়েছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক ঝুঁকি থেকে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা। তবে খবরে এমন বিষয় উঠে এসেছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে তার বাজেটে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাজেট বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) বলেছে, প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থায়ন প্রভৃতি বিষয়গুলো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করজাল পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা, কর কাঠামোর অটোমেশন, যৌক্তিক রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও সরকারি ব্যয়ে সামঞ্জ্যসতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

জানা গেছে, এবারের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা; আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসঙ্গতি রোধের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর এমন বিষয়ও উঠে এসেছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মধ্যবিত্ত বা তদূর্ধ্ব শ্রেণির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটির মতো, যার অধিকাংশই আয়কর দিচ্ছে না। কর ফাঁকি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণসহ করযোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন। প্রস্তাবিত বাজেট থেকে সাধারণ করদাতারা তেমন কোনো সুখবর পাচ্ছেন না। এ ছাড়া আসন্ন অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে টাকার অঙ্কে মোট বরাদ্দ বাড়ছে। বাজেটে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতের জন্য। চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। কৃষি খাতে বরাদ্দ ও ভর্তুকি বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ও নন-এসি রেস্তোরাঁয় ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত হুইলচেয়ার আমদানিতে বিদ্যমান সব ধরনের শুল্ককর বিলোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর ও শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে তুলে নেওয়া হয়েছে মওকুফের সুবিধা। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। এখন ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এটি আমলে নিয়ে বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি প্রত্যাশিত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More