সড়কে প্রাণহানি বাড়ছে প্রতিদিন। প্রধান কারণ নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি যানবাহন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশা। মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব তিন চাকার যানবাহন। নিবন্ধনহীন এসব যানবাহনের চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, জানে না সড়কের নিয়ম-কানুন। ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সাধারণত এজাতীয় যানবাহনগুলো কারিগরিভাবে ব্যস্ত সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এগুলোর ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানসম্মত না হওয়ায় দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে সড়কে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। মারা যাচ্ছে যাত্রী ও চালকের পাশাপাশি পথচারীরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজি বাইক নামে পরিচিত বাহনের কারণে। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় হু হু করে বাড়ছে এজাতীয় বাহনও।
বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে এ ধরনের বাহন বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না রাখায় ইজি বাইকের অবাধ আমদানির পাশাপাশি দেশেও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। অতীতে বারবার দাবি জানানোর পরও সরকার তা সড়ক ও মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। কারণ এরই মধ্যে এ ধরনের বাহন ও তার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী অনেক বেড়ে গেছে। বন্ধ করতে গেলে শুরু হয় সড়ক অবরোধসহ নানা আন্দোলন। কিন্তু এভাবে অবাধ প্রাণহানির লাগাম টানাও প্রয়োজন।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত এসব যানবাহন বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিলেও এগুলো বন্ধ করা যায়নি। মহাসড়কে চলা এসব বাহনকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছিলো, কারিগরি মানোন্নয়নের শর্তে এলাকা ও সড়ক ভেদে এ ধরনের নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। তবে এগুলোর নিবন্ধন এখনো দেয়া শুরু করেনি সরকার। ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব গাড়ি আমদানি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়। তবে কর্মসংস্থান রক্ষার যুক্তিতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের বিরোধিতায় তা অনুমোদন করা যায়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিআরটিএর ‘দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি’র প্রতিবেদনে জানা যায়, সারা দেশে অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন চলছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যানবাহনকে অনুমতি দিয়ে চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যেমন জরুরি, একইভাবে নিরাপদ সড়কও জরুরি। মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত বেড়ে চলাটাও কাম্য নয়। যানজট কমানো এবং সড়কে যানবাহনের গতি রক্ষাও জরুরি। ইজি বাইক নামক যানবাহনগুলোর নিরাপত্তার মানোন্নয়ন ও চালকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এগুলোকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.