লাভ ক্ষতির হিসেব কষেই হোক গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট

প্রায় সব কিছুরই ভালো এবং মন্দ দুটি দিকই থাকে। কতটুকু ভালো, কতোটুকু মন্দ তা মাপার যন্ত্রটা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন। সেটাই সঙ্গত। দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণেই মূলত মাপযন্ত্র পক্ষপাতদুষ্ট হয়। সমাজের অনেক কিছুই হয়েছে এবং হচ্ছে যা বিশ্লেষণে নিরপেক্ষ শব্দটাই যেনো প্রতারণাকর প্রত্যায় হয়ে দাঁড়ায়। ন্যায়- অন্যায় মাপার ক্ষেত্রে কি আলু মাপা দাঁড়ি পাল্লা খাটে? ন্যায় অন্যায়ের মাত্রা মাপতে যেমন দরকার সচেতনতা, তেমনই ভালো মন্দ মাপতেও দরকার বিচক্ষণতা। আর ভবিষ্যতের ভালো মন্দ মাপতে অতীত বিশ্লেষকসহ দূরদর্শী না হলে কি চলে? যে সমাজের মানুষ যতো সচেতন, যতো বিচক্ষণ সেই সমাজ ততোটাই উন্নত। আমাদের সমাজের বাস্তবতা নিরিখে কতটা পিছিয়ে তা যারা উন্নত সমাজ দেখেননি বা উন্নত সমাজ সম্পর্কে জানেন না তাদের বেশিরভাগই নিশ্চয় অতোটুকুতেই খুশি, যতোটুকু রয়েছে।
উন্নয়ন প্রশ্নে কিছু ভিন্নমত থাকেই, থাকবেই। উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার তা হলো উপকারভোগী কারা এবং তাদের সংখ্যা কতো। সমাজের স্বার্থ এবং ব্যক্তি স্বার্থন্ধতায় স্বেচ্ছাচারিতার পরিমাণ নিরূপণের দাবি সব সময়ই যুক্তিযুক্ত। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের একটি মাঠে ১৭৯ একর জমিতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে তার সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উঠে এসেছে। যে মাঠে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই মাঠের জমি বালু। তপ্ত। এটা যেমন স্থান পছন্দকারী তথা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তরফে বলা হচ্ছে, তেমনই স্থানীয়দের অনেকেই ভিন্নমতপোষণ করে তিন ফসলি জমি বলে দাবি করে পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনে আপত্তি তুলেছে। এ আপত্তি জানিয়ে গতকালই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও পেশ করা হয়েছে। যে জমিতে গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট করার প্রস্তাব করা হয়েছে এই জমির মালিকদের দাবিকৃত মূল্যেই কেনা হবে বলে জানানো হয়েছে। অধিগ্রহণ নয়, সরাসরি জমির মালিকদের নিকট থেকে তা কেনা হবে বলেও জানিয়েছে। এর মধ্যদিয়ে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো জমির মালিক জমি বিক্রি করতে না চাইলে প্লান্ট স্থাপনের সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের দাবি, জমির প্রকৃত মালিকদের অনেকেই জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তা হলে আন্দোলন কেনো? কেনোই বা কৃষি জমি বিনষ্ট হচ্ছে বলে দাবি তুলে গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন না করার জন্য বলা হচ্ছে? পরিবর্তন, পরিবর্ধণে এরকম প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠালগ্নেও এ ধরনের অনেক প্রশ্ন উঠেছে। চুয়াডাঙ্গার বদলে দর্শনায় তা স্থাপন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা এবং দর্শনার মধ্যে কে কতটুকু লাভবান তা নির্বোধও বোঝে। যদিও পরিবেশ নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছেই। গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট পরিবেশবান্ধব। দেশে মোট বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের ১০ শতাংশ সোলার প্যানেল তথা পরিবেশবান্ধব উৎপাদন কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদনের প্রতিশ্রুত রয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর। উৎপাদিত বিদ্যুত সরকারিভাবে ক্রয়ের নির্ধারিত মূল্যে যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। প্লান্টের লক্ষ্য ৫০ গ্রিড বিদ্যুত উৎপাদন। সূর্য্যের তাপ তথা রোদ কাজে লাগিয়ে এ পরিমাণের বিদ্যুত উৎপাদন কম কথা নয়। বিশাল আয়োজন।
এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার জো নেই যে, জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে আবাদী জমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদেই আবাদি জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন। বন বাদাড়ও উজাড় হচ্ছে। মূলত এ কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা, তিন আবাদি জমি গ্রাস করে অন্য কিছু করা যাবে না। রায়পুর ইউনিয়নের যে মাঠে গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেটা আসলেই কি তিন ফসলের জমি? প্রযুক্তির যুগে এটা জানা অসম্ভব নয়। তাছাড়া জমি যেহেতু অধিগ্রহণ হবে না, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কিনবে। জমি বিক্রেতাদের হিস্যা অনুযায়ী চাকির দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে তোলা হবে। যেহেতু প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠবে কর্মসংস্থান, সেহেতু বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে। মনে রাখতে হবে বড় কিছু পেতে হলে ক্ষুদ্র কিছু ছাড় দেয়া মানে লোকসান নয়। ক্ষতি বড় হলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে লাভ ক্ষতির হিসেব কষেই হোক গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More