শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমলে নিতে হবে

সম্পাদকীয়

দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য পদের চাহিদাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর ওই তথ্য যাচাইয়ে ৩ মাস পার করে ফেলেছে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ। দ্রুত শূন্য পদগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত হবে, যা বলাই বাহুল্য। অন্যদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দেয়ায় চাকরি প্রার্থীদের হতাশা বাড়ছে। যত দ্রুত সম্ভব শূন্য পদগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে পড়াশোনার ধরন বদলে ফেলা হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থী মূল্যায়নে বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে; তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জনে গুরুত্ব বাড়ানো হবে যাতে জীবনমুখী শিক্ষা অর্জনের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে-এ বিষয়ে আমরা দৃঢ় আশাবাদী। এক্ষেত্রে আমাদের সংশয় শিক্ষকদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে। যথাযথ প্রক্রিয়ার বাইরে কেউ শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না। প্রশ্ন হলো, মাধ্যমিকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক কেন দীর্ঘ সময় পরও সৃজনশীল পদ্ধতিতে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। এ পদ্ধতি সঠিকভাবে বাস্তবায়নে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা বারবার আলোচনায় এসেছে। ধারণা করা যায়, নিয়োগ পাওয়ার পর মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কেউ কেউ মূল পেশার বাইরে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। শিক্ষকের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা যেহেতু অন্য পেশাজীবীর তুলনায় ভিন্ন, সেহেতু প্রত্যেক শিক্ষককে তার মর্যাদা রক্ষায় যত্নবান হতে হবে। যেসব শিক্ষকের দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ, তারা তাদের পেশার প্রতি যত্নশীল কি না-বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। পেশার প্রতি যাদের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশে শিক্ষার অগ্রগতির পাশাপাশি এর মান যে বাড়ছে না, তা শিক্ষাবিদরা বারবার বলছেন। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সব ধরনের সংকট দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে কি না, তাও যাচাই করতে হবে। শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যে নিরুৎসাহিত করার জন্য কর্তৃপক্ষ অনেক উদ্যোগ নিলেও এ বাণিজ্য দিনদিন বাড়ছে। এজন্য মূলত দায়ী একশ্রেণির শিক্ষক। দেশের অগণিত খেটে খাওয়া মানুষ রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে বছরজুড়ে ধারদেনা করে অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে, কম খেয়ে সন্তানের শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ করেন। তাদের একটাই স্বপ্ন-সন্তান শিক্ষিত হবে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষকসমাজের হাতে। কাজেই মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে যত পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন, শিক্ষকরা যদি নিষ্ঠাবান না হন, তাহলে শিক্ষা খাতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More