আজ জুলাই মাসের শুরু। গত বছরের এ মাসে জাতি প্রত্যক্ষ করেছিল নারকীয় সব কা-, স্বৈরাচারের আসুরিক শক্তি একে একে নিয়েছিল ছাত্র ও সাধারণ মানুষের প্রাণ। এই জুলাই মাসেই হত্যা করা হয়েছিল আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক আবু সাঈদকে। সেখান থেকেই প্রজ্বলিত হয়েছিল বিদ্রোহের আগুনের সর্বদিকবিস্তৃত শিখা। একটা সরকার কতটা নিপীড়ক হলে অল্প সময়ের ব্যবধানে সরকারি গেজেট অনুযায়ী ছাত্র-জনতার ৮৩৪ জনকে হত্যা, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করা সম্ভব? এই নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। হ্যাঁ, আন্দোলনের একটা পর্যায়ে গত রেজিমের পতন ঘটানোর জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছিল। অসীম সাহসিকতায় গুলির সামনে পেতে দিয়েছিল বুক। গুলি করতে করতে হয়রান সরকারি বাহিনী এক পর্যায়ে রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। পরের মাস অর্থাৎ আগস্টের প্রথম সপ্তাহের ৫ম দিনেই সরকারের পতন ঘটে এবং স্বৈরাচারের শিরোমণি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।জুলাই আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ঐক্য পারে না, এমন কিছুই নেই, এটাই জুলাইয়ের প্রথম শিক্ষা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্রেরণাও আমরা পাই জুলাই মাসের বিদ্রোহ থেকে। শুধু দেশে নয়, জুলাইয়ের মহিমা ও মাহাত্ম্য বিশ্বেবাসীকেও বিস্মিত করেছে যেমন, তেমন তাদেরকেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস জুগিয়েছে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, জুলাইয়ের স্মৃতি থাকবে ততদিন অমলিন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হতে চলেছে। যে আকাক্সক্ষা ও আদর্শকে সামনে রেখে এই অভ্যুত্থান হয়েছিল, এক বছর পর সেই অভ্যুত্থানের স্পিরিট কি আমরা ধরে রাখতে পেরেছি? আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল স্বৈরাচারমুক্ত এমন এক গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করব, যেখানে থাকবে না গত রেজিমের মতো আর্থিক লুটপাট, যেসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, বিনির্মাণ হবে সেগুলো, বাংলাদেশ নির্বিঘেœ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, ছাত্রসমাজ-জনতা ও যেসব রাজনৈতিক দল এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল, অভ্যুত্থান শেষে অনেক ক্ষেত্রে তাদের ঐক্যে ফাটল ধরেছে। এ কারণে বিজয়ের পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই সরকারকে নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীল পরিবেশে কাজ করতে বাধা পেতে হয়েছে। রাষ্ট্রের যেসব বিষয়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে এখনও পূর্ণ ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। তবে আশার কথা, এ সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্যের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই অনেকে পুরোনো অবস্থান থেকে সরে এসে ঐকতানে সুর মেলাচ্ছেন। আমরা আশা করতে চাই, সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে প্রতিশ্রুত সময় ফেব্রুয়ারিতেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে সমান তালে। জুলাই চেতনা আমাদের যেন ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে, এটাই প্রত্যাশা। একটা জাতির জন্য সবসময় সমান সুযোগ আসে না। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর, হয়তো যুগের পর যুগ। জুলাই-আগস্ট ছিল তেমনই এক সময়। ক্যালেন্ডারের এ সময়গুলোর ওপর লাল কালির অক্ষরে দাগ দিয়ে সেগুলো চিরস্মরণীয় করে রাখতে হবে। একইসঙ্গে পালন করতে হবে নির্ধারিত কর্তব্য।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.