সবার মধ্যে সমঝোতার মনোভাব জরুরি

উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন, তা সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করি। শনিবার তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। গত রোববার আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন আশা করা যায়। প্রধান উপদেষ্টার এই উদ্যোগের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন কিছু অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে, যা দেশবাসীকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। দিনের পর দিন ঢাকা শহরে জনজীবন অচল করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং বিপরীতমুখী দাবি নিয়ে বিবদমান পক্ষের অব্যাহত কর্মসূচি পালন, পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক দিকে নিয়ে গেছে। একপর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ এবং পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়। গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতেই মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রথম দিকে সরকার যেকোনো রাজনৈতিক ও জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করত। কিন্তু সম্প্রতি কিছু বিষয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়ায় সরকারের সঙ্গে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দূরত্ব তৈরি হয়। এ দূরত্ব আরও বেড়ে যায় বিদেশে থাকা মহলবিশেষের অবিরাম উসকানিমূলক প্রচারণায়।
প্রধান উপদেষ্টা অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কিন্তু বিএনপিসহ বেশ কিছু দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে সংস্কার ও বিচার নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের চাপান-উতর আছে। কেউ চায় সংস্কার ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হোতাদের বিচার ও সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন হোক। আবার কোনো কোনো দল দুটিকে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর বিরোধী। তারা বলেছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য নির্বাচন আটকে থাকতে পারে না। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শনিবারের আলোচনায় বিএনপি নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের তিনজন সদস্যকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। ছাত্রনেতৃত্ব থেকে আসা দুই উপদেষ্টা বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছেন বলে তাদের অভিযোগ। তারা যে দলটির ইঙ্গিত করেছে, সেই দল এনসিপি ওই দিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, ওই দুই উপদেষ্টার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে এনসিপি থেকে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুনর্গঠনের দাবি সামনে নিয়ে এসেছে।
এসব বিরোধ ও পাল্টাপাল্টির পটভূমিতে প্রধান উপদেষ্টা যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন, তা বিরোধ কমাতে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি। বিগত তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেননি, এই বাস্তবতায় নির্বাচন নিয়ে সংশয় ও অনিশ্চয়তা দূর করতে সরকারের তরফে নির্বাচনের একটি রূপরেখা ঘোষণা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ছোটখাটো মতভেদ থাকতে পারে; কিন্তু পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। যে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরাক্রমশালী স্বৈরশাসককে হটাতে পারে, তারা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ ও পথ তৈরি করতে পারবে না, তা আমরা বিশ্বাস করি না। আশা করি সমঝোতা ও সহিষ্ণু মানসিকতা নিয়ে সব পক্ষ এগিয়ে আসবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More