সামনের নির্বাচনগুলো ইসির জন্য বড় পরীক্ষা

সম্পাদকীয়

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের মধ্যদিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। তিনি সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। এর মধ্যদিয়ে প্রথম একজন নারী মেয়র পেলেন গাজীপুরবাসী।

নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারের, বিশেষ করে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচনটি সার্বিকভাবে সুষ্ঠু হয়েছে বলা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং রাজনৈতিক কর্মীদের গণতান্ত্রিক আচরণে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যে সম্ভব, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তা প্রমাণিত হলো। এজন্য নির্বাচন কমিশনও (ইসি) সাধুবাদ পেতে পারে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বড় সমস্যা হলো আস্থাহীনতা। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে দায়িত্ব নেয়া বর্তমান ইসির অধীনে প্রথম বড় নির্বাচন ছিলো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হলেও ভোটের আগে-পরে ছিলো নানা বিতর্ক। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ইসি নির্বাচনটি বন্ধ করে দেয়। এটি ছিলো বর্তমান ইসির একটি বড় পদক্ষেপ। পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে। কিন্তু কোন প্রার্থীর জন্য ভোটে অনিয়ম করা হয়েছিলো, ইসির তদন্তে তা উঠে আসেনি। প্রার্থী, স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের ব্যাপারে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ফলে বিরোধী দল বা প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় আনতে পারেনি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে মডেল নির্বাচন ধরে স্থানীয় পর্যায়ের বাকি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ইসির প্রতি এক ধরনের আস্থা তৈরি হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর সামনে রয়েছে আরও চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই নির্বাচনগুলো হবে ইসির জন্য এক ধরনের পরীক্ষা। আস্থা ফিরে পেতে হলে ইসিকে এসব পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বেশিরভাগ নির্বাচন করছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। তবে আগের কয়েকটি নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনেও ইভিএমে ভোটের গতি ছিলো শ্লথ। এ কারণে বিকেল ৪টার পরও অনেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ ইভিএম ব্যবহারের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দ্রুত ভোটগ্রহণ করা। ইভিএমের এ জটিলতা ইসিকে অবিলম্বে কাটিয়ে উঠতে হবে। আগামীতে কোনো নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে হলে এ মেশিনের সমস্যা আগে দূর করা দরকার বলে মনে করি আমরা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More