সাম্প্রদায়িকতাপুষ্ট প্রশ্ন কীভাবে তৈরি হলো

সম্পাদকীয়

সম্প্রতি একজন রাজনীতিক আন্দোলন কতো প্রকার ও কী কী, তা বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। সেই আন্দোলনের ধরণ বুঝতে হয়তো দেশবাসীকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বাংলা প্রথম পত্রে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রশ্নপত্র কতো প্রকার ও কী কী।

গত রোববার অনুষ্ঠিত বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে উল্লিখিত প্রশ্নের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সবাই জানতে পারেন। বাংলা প্রথমপত্রে সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অংশ তুলে দেয়ার নামে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এতে নেপাল ও গোপালের যে কাহিনি সাজানো হয়েছে, তার বাস্তবতা বাংলাদেশে কতোটা আছে, সেই প্রশ্নও উঠবে। এ প্রশ্নের মধ্যদিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ রীতিমতো সাম্প্রদায়িকতাকেই উসকে দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত দেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবেও চিহ্নিত করেছে; যা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যা নেই, সে কথা আমরা বলছি না। উপমহাদেশের প্রতিটি দেশেই সাম্প্রদায়িক সমস্যা আছে। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অবস্থা অন্যদের তুলনায় ভালোই বলতে হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্রে যেভাবে নানা চরিত্রের মধ্যদিয়ে একটি ঘটনাকে প্রতীকায়িত করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। বাংলাদেশে এ রকম কোনো ঘটনার কথাও আমাদের জানা নেই। তরুণ শিক্ষার্থীদের মনে এ ধরনের প্রশ্ন নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করবে, সন্দেহ বাড়িয়ে দেবে। শিক্ষাবিদেরা এ রকম সাম্প্রদায়িকতাপুষ্ট প্রশ্ন কীভাবে তৈরি হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্নপত্র যারা তৈরি করেন, তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীন এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষায় বাংলা-২ (সৃজনশীল) পরীক্ষার একটি প্রশ্নপত্র নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। সেখানে একজন কথাসাহিত্যিককে নিয়ে এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, যাতে তাকে হেয় করা হয়েছে, যা মূলত বিদ্বেষপূর্ণ। রোববার এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা দায়িত্বশীল পদে নিয়োজিত, তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও মডারেটরদের চিহ্নিত করা গেছে। তারা যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীন কলেজশিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্ন প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুরের একটি কলেজের একজন শিক্ষক। আর চার মডারেটরের মধ্যে দুজন নড়াইলের দুটি কলেজের এবং বাকি দুজনের একজন সাতক্ষীরার একটি কলেজের এবং আরেকজন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার একটি কলেজের শিক্ষক। শিক্ষকেরা না হয় প্রশ্নপত্র তৈরিতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন; বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা কী করেছেন? প্রশ্নপত্র তৈরির ক্ষেত্রে যে নীতিমালা আছে, কেউ লঙ্ঘন করলে সেই প্রশ্ন বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু সেই প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা কীভাবে হলো, সেই প্রশ্নের উত্তরও বোর্ড কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখা হোক। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক।

এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রশ্ন যাতে শিক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছুতে পারে, সে নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কেবল প্রশ্নকর্তা শিক্ষক কিংবা মডারেটরের ওপর দায় চাপিয়েও পার পাওয়া যাবে না; মডারেটরদের যাদের তদারক করার কথা, তাদেরও জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More