স্বেচ্ছাশ্রম : নির্ভেজাল উপকৃত হোক সমাজ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থেকেই যথাযথ বিশ্রাম ও চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে রোগীর যতেœর দায়িত্ব নিতে হয় পরিবারের কাউকে। বাইরের কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে সাহস পায় রোগীসহ আক্রান্ত পরিবার। তবে যে ব্যক্তিই রোগীর সেবার দায়িত্বে থাকবেন তাকে মনে রাখতে হবে, একটু অসাবধান হলেই সেবাদানকারীও সংক্রমিত হতে পারেন এবং তার মাধ্যমে বাড়ির অন্যরাসহ সমাজের অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্যই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। তা না মানলে সর্বনাশ হওয়ার ভয়ই বেশি।
করোনা ভাইরাস ছোঁয়াচে। মানুষের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়াচ্ছে। কিছু মানুষ সংক্রমিত হলেও তিনি হয়তো অসুস্থতা বোধ করছেন না, অথচ ভাইরাস ছড়াচ্ছেন। সংক্রমিতদের সেবা যতœ দিতে গিয়েও সংক্রমিত হওয়া অমূলক নয়। এ কারণে যারা কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে যাবেন তাদের অন্যদের থেকে আলাদা থাকা অত্যাবশ্যক। ১৪ দিনের নিভৃতবাসে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যথায় তিনি রোগীর পাশেই থাকবেন, অন্য কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে তিনি যে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াবেন না তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। চুয়াডাঙ্গায় বেশ কিছু তরুণ সংগঠিত হয়েছে, তারা রোগীর পাশে গিয়ে সেবা দিচ্ছেন। প্রশংসিতও হচ্ছেন। এর সুফল মিলছে। কিছু প্রশ্নও উঠছে। যারা রোগীর পাশে গিয়ে সেবা যতœ করছেন তারা বাকি সময়ে কোথায় কাদের সংস্পর্শে থাকছেন। নিয়ম মানছেন তো? সুফল নিয়ে মেতে থাকলেই হবে না, কুফলের বিষয়টিও কি দায়িত্বশীলদের উপলব্ধি করা উচিত নয়? অবশ্যই সেবাদানের কাজে স্বেচ্ছাসেবক তথা লোকবল প্রয়োজন। যারা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছেন তাদের প্রতি অবশ্যই কৃতজ্ঞ সমাজ। খেয়াল রাখতে হবে, উপকারে শ্রম দেয়ার মধ্যদিয়ে অপকার হচ্ছে কি-না। এছাড়া সম্প্রতি বেশ কিছু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের তরফে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে চিকিৎসার কাজে জরুরি প্রয়োজনীয় উপকরণও তুলে দেয়া হচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগেও বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়ানো হচ্ছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। এরপরও যে প্রশ্নটা সঙ্গত সেটা হলো- চিকিৎসার জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় উপকরণ অপচয় হচ্ছে না তো? অসতকর্তার কারণে অপচয় বেড়ে গেলে সংকট দেখা দিতে পারে। মনে রাখতে হবে, এখন সস্তা বাহবা কুড়োনোর সময় নয়, এখন দায়িত্বপালনের সময়। সমাজে সামাজিক দায়িত্বপালনের স্বীকৃতি দিতে সমাজ কখনোই কার্পণ্য করে না।
সমস্যাটা পুরো সমাজের। সমস্যা যতো বড়ই হোক, সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে অল্পেই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সম্মিলিত প্রচেষ্টা মানে এই নয় যে, যে যার মতো করে যা খুশি তাই করবেন। প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সামাজিক দায়িত্বে এগিয়ে আসতে হবে। যারা স্বেচ্ছাশ্রম দেবেন তাদের কী কী নিয়ম মানতে হবে তা স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট থেকে শুনে নেয়া জরুরি। স্বাস্থ্য বিভাগেরও দেখা উচিত নিয়ম মানা হচ্ছে কি-না। করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ধরন দেশে সংক্রমণের চূড়ান্ত সময় পার হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কতোটা ভয়াবহ হবে তা এখনও অনুমান করা কঠিন। ফলে বন্ধ করতে হবে অপচয়, স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে জাগাতে হবে দায়িত্ববোধ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More