স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক

সম্পাদকীয়

আধুনিক বিশ্বের ক্রমাগত প্রযুক্তিগত বিপ্লব, শিল্পোন্নয়ন, শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন একটি যুগপোযোগী সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। ক্ষুদ্র আয়তনের এ দেশটি অত্যন্ত জনবহুল। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র কিংবা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটানো একটি কঠিন চ্যালেঞ্জই বটে। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা ভাগ্যের অনুকূলে ঘুরতে শুরু করলেও মাঝপথে বাদসাধে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলমান এ যুদ্ধের প্রভাব বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করে চলছে। পৃথিবীব্যাপী সৃষ্টি হয়েছে বৈশ্বিক মন্দা ও নানামুখী সংকট। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব, অভ্যন্তরীণ বহুমুখী সংকট উতরে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্য বরাবরি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তথাপি কূটকৌশলী পন্থা অবলম্বন করে ভারসাম্যের পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলেছে এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে আধুনিক রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য।

বলা হয়ে থাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকাটাই যেন মানুষের জীবনের একটি অন্যতম লক্ষ্য ও পাথেয়। এ চ্যালেঞ্জ যেমন মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি প্রযোজ্য দেশ ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। কারণ মানুষ এবং রাষ্ট্র একটি অপরটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। আর রাষ্ট্রের সেই লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও বাস্তবায়ন করে আসছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার যে প্রয়াস সেটি বাস্তবায়নে মূলত ৪টি ভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ৪টি ভিত্তি হলো ১. স্মার্ট সিটিজেন ২. স্মার্ট ইকোনমি ৩. স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। এ চারটি বিষয় স্মার্ট বাংলাদেশের নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে অর্থাৎ এই ৪টি ভিত্তি সুষমভাবে অর্জিত হলে আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে পারবো।

নাগরিক পর্যায় থেকেও বেকারত্ব দূরীকরণে স্ব স্ব উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুধু সরকারি চাকরির আশায় বেকার না থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তার মতো স্বাধীন পেশার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। নিজ নিজ কাজকে ভালোবাসতে হবে পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিককে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি সচেতন থাকতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এ যুগে প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেদের যুগপোযোগী ও যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে চলার মতো সক্ষমতা ও যুতসই করে গড়ে তুলতে হবে। ফ্রি-ল্যান্সিং-এর মতো মুক্ত ও স্বাধীন পেশার পরিধি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিপন্থি সর্বপ্রকার কার্যক্রম থেকে প্রতিটি নাগরিককে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, সমাজ ও দেশের স্বার্থে প্রয়োজনীয় গুণাবলি অর্জন করতে পারলেই একজন নাগরিকের পক্ষে স্মার্ট নাগরিক হয়ে ওঠা সম্ভবপর হবে। শুধু স্মার্ট নাগরিকরাই পারবে স্মার্ট ইকোনমির যথাযথ বাস্তবায়ন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠা ও স্মার্ট সোসাইটির একটি পরিপূর্ণ সমম্বয় সাধন করতে, আর এটি করা সম্ভব হলেই একটি আধুনিক ও যুগপোযোগী স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More