প্রতিবছর জাতীয় সিনিয়র, জুনিয়র ও সামার অ্যাথলেটিক্সের ঘরোয়া আসরে একাধিক রেকর্ড গড়ে চমক দেখান ক্রীড়াবিদরা। উল্লাস করেন, আনন্দে মেতে ওঠেন। সংবর্ধিত হন, পুরস্কার পান। কিন্তু আন্তর্জাতিক আসরে গিয়ে হতাশ করেন।
একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরে আসেন দেশে। এমন রেকর্ড গড়ে লাভ কী তাহলে। সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সামার অ্যাথলেটিক্সে সাতটি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন অ্যাথলেটরা। কেউ ১৪ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।
কেউ আবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। পুরুষদের ডিসকাস থ্রোয়ে ৪৬.৯৪ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আবদুল আলিম। ২০১০ সালে একই সংস্থার আজহারুল ইসলাম ৪৪.৯৮ মিটার দূরত্বে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন। মেয়েদের শটপুটে সেনাবাহিনীর জান্নাত বেগম ১৩.৯১ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন জাতীয় রেকর্ড করেন। ১৩.৫২ মিটারের আগের রেকর্ডটি ছিল নৌবাহিনীর জাকিয়া আক্তারের।
মেয়েদের পাঁচ হাজার মিটার দৌড়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জেতেন নৌবাহিনীর অ্যাথলেট রিংকি বিশ্বাস। তিনি সময় নেন ১৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। ২০২৪ সালে এই ইভেন্টে আগের রেকর্ডটি ছিল একই সংস্থার শামসুন্নাহার রত্নার ১৮ মিনিট ৪৯.৩৮ সেকেন্ডের।
মেয়েদের তিন হাজার মিটার ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন নৌবাহিনীর রিংকি বিশ্বাস। তিনি সময় নেন ১০ মিনিট ২৭.৬০ সেকেন্ড। ২০২১ সালে ১০ মিনিট ৪৩.৩০ সেকেন্ডে আগের রেকর্ডটি ছিল তার নিজেরই। মেয়েদের ট্রিপল জাম্প ইভেন্টে ১২.৪৯ মি. লাফিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জেতেন সেনাবাহিনীর জান্নাতুল। ১২.৩৮ মিটারের আগের রেকর্ডটি ছিল সনিয়া আক্তারের।
পুরুষদের পোলভল্ট ইভেন্টে ৪.৫১ মি. উচ্চতা অতিক্রম করে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন মো. সৌরভ মিয়া। আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন মো. শাওন মিয়া। অতিক্রম করছিলেন ৪.৫০ মিটার উচ্চতা।
মেয়েদের ১০ হাজার মিটার দৌড়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন নৌবাহিনীর রিংকি বিশ্বাস। তিনি সময় নেন ৩৯ মিনিট ১৪.৭৩ সেকেন্ড। ২০২২ সালে ৪১ মিনিট ০৯.৩২ সেকেন্ডে করা আগের রেকর্ডটি ছিল পাপিয়া খাতুনের।
ঘরোয়া আসরে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়, আন্তর্জাতিক আসরে তা ম্রিয়মান। এই রেকর্ডগুলো গেমসের স্বর্ণজয়ীদের কাছে তেমন কিছুই নয়। যদিও সামার অ্যাথলেটিক্সে স্বর্ণজয়ী সবাই সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে পদক জিততে চান।
এই টাইমিং বা মিটার দিয়ে সত্যিই কি এসএ গেমসে স্বর্ণ জেতা সম্ভব! অসম্ভব। সবশেষ নেপাল এসএ গেমসের স্বর্ণজয়ীদের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট। পুরুষদের ডিসকাস থ্রোয়ে ৫৭.৮৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন ভারতের কিরপাল সিং। যেখানে আবদুল আলিম ১৪ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে দেন ৪৬.৯৪ মিটার অতিক্রম করেই। এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ীর চেয়ে তিনি পিছিয়ে রয়েছেন ১০.৯৪ মিটার।
মেয়েদের শটপুটে সেনাবাহিনীর জান্নাত ১৩.৯১ মিটারে যে রেকর্ড গড়েছেন তা এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারতের আভা খাতুয়ার ১৫.৩২ মিটারের ধারেকাছেও নেই। জান্নাত পিছিয়ে আছেন ১.৪১ মিটার। ৫ হাজার মিটার দৌড়ে ১৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন নৌবাহিনীর রিংকি বিশ্বাস।
তিনি পিছিয়ে আছেন এসএ গেমসে শ্রীলংকার নিলানী রত্নায়েকের স্বর্ণজেতা টাইমিংয়ের (১৬ মিনিট ৫.১৮ সেকেন্ড) চেয়েও ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ড।
মেয়েদের ট্রিপল জাম্প ইভেন্টে জান্নাতুল ১২.৪৯ মিটার দূরত্বে লাফিয়ে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়লেও এসএ গেমসে স্বর্ণ জেতা শ্রীলংকার হাসিনি পাবোদার দূরত্ব ছিল ১৩.২১ মিটার। পার্থক্য .৭২ মিটারের। মেয়েদের ১০ হাজার মিটার দৌড়ে নতুন রেকর্ড গড়তে নৌবাহিনীর রিংকি বিশ্বাস সময় নেন ৩৯ মিনিট ১৪.৭৩ সেকেন্ড।
এসএ গেমসে নেপালের সান্তোষী শ্রেষ্ঠা স্বর্ণপদক জিতেছেন ৩৫ মিনিট ০৭.৯৪ সেকেন্ডে। পার্থক্য ৪ মিনিট ০.৬ সেকেন্ডের। এই পার্থক্যগুলোই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে রেকর্ড গড়লেও দক্ষিণ এশীয় অ্যাথলেটদের তুলনায় কতটা পিছিয়ে আমাদের দেশের অ্যাথলেটিক্স।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.