আন্দোলনে চোখ হারানো লামিমকে নিয়ে তাসনিম জারার আবেগঘন পোস্ট

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা সম্প্রতি সারা দেশে সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। জেলায় জেলায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। জনগণের প্রত্যাশার কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনছেন তারা। এসব সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাও।

শুক্রবার তাদের সভা ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে। সেখানে আন্দোলনে চোখ হারানো ১৫ বছরের কিশোর লামিম জানায় দেশ নিয়ে তার ভাবনার কথা।

শুক্রবার রাতে ডা. তাসনিম জারা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লামিমকে নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট করে এসব কথা বলেছেন।

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘লামিমের বয়স মাত্র ১৫। একটু আগে ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে দেখা হলো। সেখান থেকে কিছু দূরেই সে আন্দোলন করেছিল গত বছর।’

‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন গিয়েছিলে আন্দোলনে? বন্ধুরা ছিল তোমার সঙ্গে? সে মাথা নাড়ল। না, কেউ ছিল না। সে একাই গিয়েছিল।’

জারা লেখেন, ‘কেন গিয়েছিলে? উত্তরে সে বলল, বড় ভাইয়ের ফোনে আর টেলিভিশনে আন্দোলনের দৃশ্য দেখছিল। দেখছিল যে তার ভাইদেরকে কীভাবে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এক সঙ্গে মিলে তাড়া করছে, মারছে। ভেতর থেকে তাগিদ এসেছিল যে ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’

‘বাবা-মা মানা করেছিল রাস্তায় নামতে। কিন্তু ৪ আগস্ট মা-বাবাকে ফুটবল খেলার কথা বলে যোগ দেয় আন্দোলনে। সেখানে সারা দিন ছিল। বিকালের দিকে গুলি লাগে তার বাম চোখে।’

তাসনিম জারা লেখেন, ‘লামিম সেই বাম চোখ দিয়ে আর দেখতে পায় না। স্বপ্ন তো অনেক ছিল, বলল সে, কিন্তু এখন জানি না কী হবে। মনোযোগ দিতে পারি না ঠিকমতো।’

‘জানতে চাইলাম দেশ নিয়ে ওর চাওয়া কী। লামিম বলল, আমি চাই দেশ যাতে সুন্দর হয়। কোনো চুরি-বাটপারি যাতে না থাকে।পনেরো বছরের একটি ছেলে। যার একটি চোখ রাষ্ট্র কেড়ে নিয়েছে। আর তার একমাত্র চাওয়া, একটা সৎ দেশ চাই।’

এনিসিপি নেত্রী লেখেন, ‘এই সহজ কথাটাই সংস্কারের মূল আকাঙ্ক্ষা। এমন দেশ গড়া যেখানে নিজের প্রাপ্য পেতে কোনো নাগরিককে ঘুষ দিতে হবে না। যেখানে পনেরো বছরের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পাবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী তার চোখ কেড়ে নেবে না।’

সবশেষ জারা লেখেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেক সচেতন। অনেকে ধরতে পারছেন না এই প্রজন্মের ভেতরে কী ধরনের রুপান্তর ঘটে গেছে। তারা জানে কোনটা ভাঙা, কোনটা পচা। আর সেসব সরাসরি বলতেও তারা সংকোচ করে না। এক ধরনের নির্মল স্পষ্টতা তাদের মধ্যে আছে, যেটা কপটতা দিয়ে ঢেকে যায়নি, ভয় দিয়ে বিকৃত হয়নি। তাই প্রথম প্রতিবাদ তারাই করে, আবার প্রথম বলিও হয়। তাদের সাহসের মতোই সাহসী এক দেশ আমরা গড়তে পারি কি না, এখন প্রশ্ন সেটা।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More