দুই সহোদর মিলে পরিবারের সবাইকে হত্যা যা লেখা ছিলো ফারহানের সুইসাইড নোটে

মাথাভাঙ্গা মনিটর: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসের কাছে এলেন শহরে বাংলাদেশি একটি পরিবারের ৬ সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে নেমেছে পুলিশ। পাওয়া গেছে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলো ছোট ভাই ফারহান তৌহিদ।
পুলিশ জানিয়েছে, দুই সহোদর মিলে নানি, ভাই ও বাবা-মাকে খুন করেন এবং তারপর নিজেরা আত্মহত্যা করেন। ১৯ বছর বয়সী যমজ ভাই-বোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ মিলে প্রথমে ঠা-া মাথায় খুন করে পরিবারের চার সদস্যকে। নিহতরা হলেন- বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪) ও তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন্নেসা (৭৭)। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকা-ের আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেন। তাতে এ হত্যাকা-ের পেছনের রহস্যও উন্মোচন হয়। ফারহান সেই সুইসাইড নোটের শিরোনাম দিয়েছে, ‘পরিবারের সবাইকে হত্যার পর আমি আত্মহত্যা করলাম।’ পাঠকদের জন্য কিছু অংশ তুলে ধরা হলো- যদি মারা যাই, তাহলে হয়তো আমি কিছুটা নজর কাড়বো। সারাজীবন যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মোকাবেলা করে এসেছি, আমি সেগুলো প্রকাশ করতে যাচ্ছি। কে জানে, হয়তো ভালো কোনো ফল আসতে পারে। যারা জানেন না, তাদের উদ্দেশে বলছি, আমি নবম শ্রেণি (২০১৬) থেকে বিষণœতায় ভুগতাম। প্রথমবার নিজের দেহ নিজে কাটার কথা মনে পড়ছে। এটা ছিলো ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। আমি এই কাজটি করেছিলাম শিল্পকর্মের কাঁচি দিয়ে। তবে কাঁচি এতোটাই ভোঁতা ছিলো যে, এটা হাত কাটার চেয়ে চামড়ায় ঘষা খাচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত আমার চামড়া কাটলো। কয়েকটি কাটা দাগের পর যন্ত্রণা কমা শুরু হলো। এই অনুভূতির প্রতি আসক্ত হতে বেশি সময় লাগলো না। দুর্ভাগ্যবশত ছোটদের জন্য তৈরি করা কাঁচিগুলো মাংস কাটার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই, আমাকে ছুরির দিকে ঝুঁকতে হলো। রান্নাঘর থেকে এটা নেয়া ছিল অনেক সহজ। এগুলো ভোঁতা ছিল, কিন্তু অনেক ভালো কাজ করতো। প্রথম দিকে আমি প্রত্যেক সপ্তাহ শেষে কাটতাম। কিন্তু স্কুল যাওয়ার পর আমি এটি বাড়িয়ে দিলাম। প্রত্যেক সপ্তাহে, প্রত্যেক দিন এবং শেষ পর্যন্ত একদিনে একাধিকবার কাটতাম। আমি যখন স্কুলে ছিলাম, তখন শরীর কাটতে মন চাইতো। বাথরুমে যখন আমি আমার শরীর জখম করতে ব্যস্ত, তখন ক্যালকুলাস কুইজে বাদ পড়েছি, আমি গুনেও শেষ করতে পারবো না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো, যখন আমার তিন ভালো বন্ধু আমাকে ছেড়ে গেল। তারা আমাকে এর আগে সাহায্যের চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে, বিষণœ একজনকে বোঝানো অনেক কষ্টসাধ্য। প্রথমে আমি রাগ করেছিলাম। কিন্তু এর বিপরীতে তাদের কী করা উচিত ছিল? আমার প্রথম পয়েন্ট ছিল: সাহায্য পাওয়া। সবাই বলতো, ‘তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে পার’ এবং তারা তাদের গল্পে অপ্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যের লিংকগুলো পোস্ট করতো। কিন্তু আপনি যখন আসলে কোনো বিষণœ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে থাকবেন, তখন এটা ঠিক করা কতোটা অসম্ভব, তা বুঝতে পারবেন। আমি কতোটা বিষণœ, তা বলে কখনোই কারও কাছ থেকে উপকার পাইনি। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। একমাত্র সেসব লোক যারা সত্যিকার অর্থে আঁকড়ে ছিলো, তারা সেটা করতে বাধ্য ছিলো। তারা স্রেফ যতœ নেয়ার ভান করতো এবং কখনোই সরাসরি সাহায্য করতো না। এটা ছিলো আমাদের উভয়ের সময়ের অপচয়। কোনো এক বছর শীতের একটি সময় অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজের শরীর কেটে যাচ্ছিলাম। তখন আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি আবিষ্কার করলাম। আমি বিষণœতায় ভোগার বিষয়টি আর লুকোতে পারলাম না।’ এলেন সিটি পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেলী জানান, সম্ভবত গত শনিবার এমন নৃশংসতার ঘটনা ঘটে। ১৯ বছর বয়েসী একজনের এ পরিস্থিতির আলোকপাত করা হয়েছে। পুলিশের মতে আত্মহত্যার প্রসঙ্গতে রয়েছে হতাশার ধারা বিবরণী। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কোনো কারণে হয়তো তৌহিদুল ইসলামের দুই পুত্রই মনমরা ভাব বা বিষণœতায় ভুগছিলেন।
জানা গেছে, নিহতদের সবার বাড়ি পাবনা জেলার দোহারপাড়ায়। এমন ঘটনায় গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনরা কিছুতেই এ অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। নিহতদের স্বজনরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, অন্তত পক্ষে নিহতদের দাফন যেন দেশের মাটিতে করার ব্যবস্থা করা হয়।
স্বজনরা জানান, ঢাকার ছেলে আমেরিকা প্রবাসী তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে পাবনা শহরতলির দোহারপাড়া গ্রামের মরহুম আবুল মোসলেমের মেয়ে আইরিন ইসলাম নীলার বিয়ে হয়। বিয়ের পর পরই নীলা স্বামীর সঙ্গে পাড়ি জমান স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। তাদের তিন সন্তান তানভীর তাওহীদ, ফারবিন তাওহীদ এবং ফারহান তাওহীদকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলেন। আড়াই বছর আগে তৌহিদ-নীলা দম্পতি দেশে আসেন এবং তারা আবার ফিরে যাওয়ার সময় তৌহিদের শাশুড়ি অর্থাৎ নীলার মা আলতাফুন্নেছা তাদের সঙ্গে টেক্সাসে যান। ১ এপ্রিল আলতাফুননেছার পাবনায় ফেরার কথা ছিলো। কিন্ত করোনার কারণে নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হয়ে পরবর্তীতে ৭ এপ্রিল দেশে আসার দিন ঠিক হয়। কিন্তু তার আগেই নৃশংসভাবে খুনের শিকার হন মেয়ে জামাতা ও নাতি নাতনির সঙ্গে আলতাফুন্নেছাও।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More