ধ্বংসস্তূপের পাশে কান পেতে আছে মানুষ

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: গোটা জনপদই এখন মৃত্যুপুরী। মুমড়ে-মুচড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সারি সারি মৃত্যুকূপ। দুদিন আগেও বিধ্বস্ত ভবনের গোরস্থান থেকে ভেসে আসত কান্নার আওয়াজ। লম্বা নিঃশ্বাসের ভারী ভারী শব্দে ঝুরঝুর করে খসে পড়ত ভাঙা দেয়ালের বালি। থেমে থেমেই শোনা যেতো বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। কোথাও আবার অস্ফুট গোঙানি। যখনই ভাঙা দেয়াল সরিয়ে জেগে উঠেছে রক্তাক্ত হাত- তখনই দৌড়ে ছুটে গেছে উদ্ধারকারীরা। ইট-রড কেটে তাকে টেনে তুলেছেন। এভাবেই চলছিল উদ্ধারকাজ। কিন্তু শুক্রবারের চিত্র ছিলো (৫ দিন পর) ঠিক এর উলটো। যেন নিস্তব্ধ গণকবর। কোনো শব্দ নেই, আর্তনাদ নেই, চিৎকার নেই। আত্মীয়স্বজন-উদ্ধারকারীরা সবাই কান পেতে আছে একটু শব্দের জন্য। একটা নিঃশ্বাস, একটু শব্দের জন্য ধ্বংসস্তূপগুলোর গায়ে গায়ে গিয়ে কান পাতছেন- কেউ বেঁচে আছেন কিনা তা শুনতে। স্বজনদের উদ্ধার অভিযান নিয়ে এমন বর্ণনাই দিলেন অনুসন্ধানকারীরা।

তুরস্কের গাজিয়ানতেপ থেকে শুরু করে সিরিয়ার আলেপ্পো-গোটা জনপদই এখন ‘ধ্বংসস্তূপের বিরানভূমি’। সোমবার শেষ রাতের ৭.৮ মাত্রার ওই দানবীয় ভূমিকম্পের পর নগর বা নাগরিক জৌলুস হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে এই সভ্য লোকালয়। এখন এর নতুন পরিচয়-মৃত্যুপুরী। মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়েছে।

ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের ভেতরে এখনো রয়ে গেছে হাজার হাজার মানুষ। তাদের উদ্ধার করতে প্রতি ধ্বংসস্তূপে জীবনের আওয়াজ শুনতে কান পাতছে উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা যায় এমন প্রতিটি কাজের সরঞ্জামের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। তখনই ফাটলে ভেসে ওঠে সিরিয়ার এক তরুণ যুবক হালিতের জীবিত মুখ। দেখামাত্রই উদ্ধারকারী দল পানি, কম্বল আর স্ট্রেচারের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের লাইনও তৈরি করে দেয় রাতারাতি। হালিতের চাচাতো ভাই জেকেরিয়ার মনেও কিছুটা সাহস সঞ্চার হয়। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে জেনেও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যায় তারা। আর তখনই উদ্ধারকর্মীদের আশায় গুড়েবালি দিয়ে মারা যান হালিত। এর কিছুক্ষণ পরই এই ভবনের পেছন থেকে ভেসে আসে আরেকটি চিৎকার। দৌড়ে ছুটে যান তারা। একটি মেয়ে জানায়, ‘ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কান্না শুনেছি আমার বোনের। দয়া করে তাকে তাড়াতাড়ি বের করুন।’ এইি পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে দূরে সরে যায় মেয়েটির দাদা। জানায়, গতকাল রাত থেকে এখানে অপেক্ষা করছেন তারা। তখনই অজ্ঞান হয়ে যায় হারানো মেয়েটির বোন। যে আওয়াজ তাদের মনে আশা সঞ্চার করেছিলো ততক্ষণে সে আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায় চিরকালের মতো।

ধ্বংসস্তূপ থেকে ১০১ ঘণ্টা পর ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার: তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ইসকেনদেরুনে ভূমিকম্পের ১০১ ঘণ্টা পর বিধ্বস্ত একটি ভবনের নিচ থেকে ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। মুরাত বেগুল নামে একজন উদ্ধারকর্মী সংবাদ সংস্থা এপিকে জানান, উদ্ধার হওয়া ৬ জন একই পরিবারের। ধসে পড়া একটি ভবনের অক্ষত সামান্য জায়গায় গাদাগাদি করে দীর্ঘ এই সময় অবস্থান করেছেন তারা। উদ্ধারকর্মীরা বলেছেন, অত্যন্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে থাকা অনেককেই উদ্ধার করতে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

১০১ ঘণ্টা পর তুরস্কে দুই বোনকে জীবিত উদ্ধার : ভূমিকম্পের ১০১ ঘণ্টা পর কাহরামানমারাস শহরে দুই কিশোরী বোনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির ফায়ার সার্ভিস এই তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে আনতালিয়া মেট্রোপলিটন ফায়ার ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ৯৯তম ঘণ্টায় ১৫ বছর বয়সি আইফারকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হয়। এর দুই ঘণ্টা পর তার বোন ফাতমাকে (১৩) উদ্ধার করা হয়।

লাখ লাখ শিশুর খাদ্য, আশ্রয়, গরম কাপড় প্রয়োজন: সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে লাখ লাখ শিশুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, আশ্রয় এবং গরম কাপড় প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটির সিরিয়াবিষয়ক মিডিয়া, কমিউনিকেশন বিষয়ক পরিচালক ক্যাথ্রিন আচিলস বলেন, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়াজুড়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বে এখন পর্যন্ত আর দেখা যায়নি। পরিবারের সদস্যদের থেকে শুরু করে বাড়িঘর, খাদ্য, পরিষ্কার পানি-সবই হারিয়েছে তারা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More