প্রতিফলিত হয়নি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার:এনবিআরকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ঠিকঠাকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে এনবিআর কর্মীরা আন্দোলনে নামায় যদি বিদ্বেষবশত সংস্থাটিকে দুই ভাগ করা হয়, তাহলে তা জাতির জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

রাজধানীর গুলশানে শনিবার এনবিআর সংস্কারবিষয়ক এক গোলটেবিলে নিজের এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন রাজস্ব খাত সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন। পুলিশ প্লাজায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) কার্যালয়ে এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ এ বৈঠকের আয়োজন করে। এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন পরামর্শক কমিটির প্রধান ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সরকার যে অধ্যাদেশটা দিয়েছে, তাতে কী বলা আছে, পরামর্শক কমিটি কী সুপারিশ করেছে, তা সবার জানা উচিত, আলোচনা করা উচিত। কারণ এখানে যদি ভুল হয় বা এই দুই বিভাগের সমন্বয় যদি ভুল হয়, তাহলে কিন্তু এখন যে অবস্থা আছে, তার চেয়ে ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতি হবে।’ তিনি আরও বলেন, এনবিআর সংস্কার এখন যেভাবে করা হচ্ছে, তা আসলেই ব্যবসায়ী সমাজ চাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রচুর বিভ্রান্তি রয়েছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, এনবিআর দুই ভাগ করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী মহল ও অংশীজনদের সুপারিশ আমলে নিতে হবে। শুধু প্রতিবেদন দেওয়া হলো, অধ্যাদেশও হলো, কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গীকার না থাকলে তা বাস্তবায়ন হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় থেকে যায়।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যা বললেন : চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, রাজস্ব আদায়ের বড় জায়গা হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন ২০ বছর আগে সেখানকার কমিশনার ছিলেন। তিনি সেখানে অটোমেশন যতদূর করে আসছেন তাতেই শেষ। এরপর আর এক ইঞ্চিও এগোয়নি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো-এর কার্যক্রম অর্ধেক অটোমেশন ও অর্ধেক ম্যানুয়াল। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যদি অটোমেশন হয় তবে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু অটোমেশন শুধু এনবিআরের হলে হবে না, এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও হতে হবে।

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি ভাগে বিভক্ত করলেই যে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, তা নয়। রাজস্ব বোর্ড ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাটুসংক্রান্ত রাজস্ব নীতিসমূহ দীর্ঘমেয়াদি, কমপক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদি করা প্রয়োজন। এছাড়া আইন, এসআরও, বিধিবিধান, প্রজ্ঞাপন জারি ও সংশোধনের ক্ষেত্রে অংশীজনদের মতামত নিতে হবে।

এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, দেশের ৩ শতাংশেরও কম মানুষ আয়কর দেন। ব্যবসায়িক পর্যায়ে বড় ধরনের কর ফাঁকি আছে। কর আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়া খুবই দুর্বল; প্রায়ই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর সংগ্রহের ব্যবস্থা অতিরিক্ত জটিল ও স্বেচ্ছাচারমূলক। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, সংস্কার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের মধ্যে আগ্রহের অভাব দেখা যাচ্ছে। পৃথক যেভাবে করা হচ্ছে, তা সরকারের ‘রাইট ডিসিশন’ কিনা, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই পৃথকীকরণ ইফেক্টিভ না হলে এখন তো এক জায়গায় হয়রানি হয়, তখন দুটি আলাদা বিভাগে দুটি জায়গায় হয়রানি হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More