বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর : যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৩

গ্রেফতার ৩জনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ : যুবলীগ নেতা বহিষ্কার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন যুবলীগ নেতা। এ ঘটনায় ওই যুবলীগ নেতাসহ তার দুই সহযোগীকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রায়ডাঙা গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান আনিস, তার ক্যাডার কয়া গ্রামের শাহাবউদ্দিনের ছেলে হৃদয় আহমেদ ও একই উপজেলার ছেঁউড়িয়া ম-লপাড়ার নাজিম উদ্দিনের ছেলে সবুজ হোসেন। ওই যুবলীগ নেতার সঙ্গে কয়া মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ ও কলেজের অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে কুমারখালী উপজেলা যুবলীগের জরুরি সভায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা যুবলীগের দফতর সম্পাদক মনোয়ার হোসেন। গ্রেফতার তিন আসামিকে শনিবার কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমারখালী থানার ওসি (তদন্ত) রাকিবুল হাসান বলেন, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আসামিদের আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো আদালতে শুনানি হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে কয়া মহাবিদ্যালয়ে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের রেশ কাটতে না কাটতেই বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ অবস্থায় অপরাধীদের ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। তারা শুক্রবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিসকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে ঘটনায় জড়িত অপর দুজন হৃদয় আহমেদ ও সবুজ হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাচ্চু নামে আরও একজন জড়িত আছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত বলেন, কলেজ ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে বলে তারা গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, এর পেছনে অন্য কারো মদদ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো ঘটনা জানা সম্ভব হবে। পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় জড়িত বাচ্চু নামে একজন এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কুষ্টিয়া শহরে মানববন্ধন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন কয়া ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেছে। এছাড়া ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ নেতার জড়িত থাকার ঘটনায় সংগঠনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, তারা এ ঘটনায় বিব্রত। ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা যুবলীগ। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। দলীয় পরিচয় মুখ্য নয় ঘটনার পেছনে আরও কোনো বড় মাথা আছে কিনা তা খুঁজে বের করার দাবি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More