বাজারে এসেছে চুয়াডাঙ্গার আম : গতবারের তুলনায় দাম কম আচার তৈরির জন্য ফজলি ও কাঁচা গুটির রয়েছে বেশ চাহিদা

স্টাফ রিপোর্টার: বাজারে আসতে শুরু করেছে চুয়াডাঙ্গার আম। জেলায় ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ মেনে গত বৃহস্পতিবার বাগান থেকে প্রথম আম পাড়ার পর গতকাল শুক্রবার আড়তে তোলা হয়েছে। স্থানীয় বাগানের আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম তোলা হলেও পাইকারি আড়ত ও খুচরা দোকানগুলোতে এখনো সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। শহরের পুরাতন ব্রিজমোড় এলাকায় ফলের পাইকারি বাজার। ব্যবসায়ীরা জানান, মরসুমের প্রথম দিন (শুক্রবার) আড়তগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মণ আম বিক্রি হয়েছে। দামও ভোক্তাদের নাগালে। গত বছর মরসুমের প্রথম দিনে আড়তগুলোতে জাতভেদে প্রতি কেজি আম ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা এবং খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও এবার পাইকারি ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা স্থানীয় আড়ত থেকে আম কিনে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তিনটি বাজারসহ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রেতাদের সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ ও স্থানীয় বোম্বাই আমের দিকে ঝোঁক ছিলো বেশি। আঁটির আম হলেও এই দুই জাতের আমের আকার ও রঙের কারণে বেশি বিক্রি হয়। এ ছাড়া আচার তৈরির জন্য ফজলি ও কাঁচা গুটির বেশ চাহিদা আছে।
সরেজমিনে ফলের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা দেখা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমের বড় চালানগুলো বাগান থেকে ট্রাকভর্তি হয়ে সরাসরি দেশের বিভিন্ন মোকামে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া আমের মরসুম ঘিরে গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী কিছু বাজার। এ জন্য পাইকারি বাজার জমে উঠতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। ফাতেমা ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শুকুর আলী বলেন, জেলায় এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। আমের চাপ বেশি হওয়ায় দাম কম। ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে দাম। গত বছর শুরুর দিকে বোম্বাই আম প্রতি মণ (৪০ কেজি) ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এবার তা এক হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কলমিলতা (আঁটি) আমের দাম আরও কম। মাস্টার ট্রেডার্স আড়তের মালিক শামসুল আলম বলেন, দাম কম হওয়ায় এবার বেচাকেনা সন্তোষজনক। শুক্রবার দেশি আঁটির আম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বোম্বাই ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা ও অন্যান্য গাছ পাকা কিছু আম প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যে আমটি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গতবার সেটির সর্বনিম্ন দাম ছিলো ৬০ টাকা। তিন বছর ধরে আমের ব্যবসা করেন সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের হেদায়েত হোসেন। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা শহরের পাইকারি আড়তে তিনি আম কিনতে আসেন। বলেন, ‘গত বচরের চাইতি দাম কম, বেচাকিনাও ভালো। খদ্দেরে ভালোই খাবেনে।’ দামুড়হুদার জয়রামপুর গ্রামের মরসুমি ফল ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন বলেন, ‘আইজ বিকেলে জয়রামপুর হাটে বেচপো। বেচাকিনা ভালোই হবে আশা করি।’ খুচরা ফল বিক্রেতা রাজু মিয়া শহরের নদীর ধার নিচের বাজারের দোকানে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করেন। তার দোকানে বিভিন্ন জাতের আম সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেলো। রাজু মিয়া বলেন, ‘আগে মানুষ এক-দুই কেজি করে কিনলিউ এবেড্ডা দাম কম হওয়ায় অনেকেই ৫ থেকে ১০ কেজি করেও কেনছে। চেষ্টা করছি অরজিনাল গাচ পাকা আম বিক্রি করার।’ ওই বাজারের ক্রেতা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে তাপপ্রবাহের কারণে আম খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। তাই আমের স্বাদ নিতে বছরের প্রথম দিন কিছু কিনে নিলাম। কারণ, আগামী দিনে বেশি দাম দিয়েও বাজারে সুস্বাদু আম পাওয়া না-ও যেতে পারে।’
জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও আখচাষিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলায় গতকাল আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম সংগ্রহ শুরুর মধ্য দিয়ে আম সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এরপর ২০ মে থেকে হিমসাগর, ২৮ মে থেকে ল্যাংড়া, ৫ জুন থেকে আম্রপালি (বারি আম-৩), ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ২৮ জুন থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ সংগ্রহ ও বাজারজাতের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, চলতি মরসুমে ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫ মেট্রিক টন হিসাবে ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More