বিসিবি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার:নাটকের মূল অংশ দৃশ্যপট হয়ে গেছে গত ৩ অক্টোবর গভীর রাতে। বনানীর হোটেল শেরাটনের এক নিরিবিলি কক্ষে পড়েছে ৯৫ শতাংশ ভোট। সোমবার (৬ অক্টোবর) প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। সকাল ১০টা থেকে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

তফসিল অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টায় প্রকাশিত হবে বোর্ড পরিচালক পদে ভোটগ্রহণের প্রাথমিক ফলাফল। এরপর পরিচালনা পর্ষদের সভায় নির্বাচিত হবেন বিসিবির নতুন সভাপতি ও দুই সহসভাপতি। রাত ৯টায় সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের ফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

৩ অক্টোবরই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে কে জিতছেন, কে হারছেন। ক্যাটাগরি-২, অর্থাৎ ক্লাব কোটা থেকে তামিমরা সরে দাঁড়ানোয় টিকে ছিলেন ১৬ জন প্রার্থী, নির্বাচিত হবেন ১২ জন। কারা বাদ পড়বেন, তাও জানিয়ে দেওয়া হয় সেদিন। তবে কাল নতুন মোড় নিয়েছে নির্বাচনে। আদালত যে ১৫ ক্লাবের ভোটাধিকার বাদ দিয়েছিল, তাদের আবার ভোট দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এ কারণে পরিচালক নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কিছুটা ভয় তৈরি হয়েছে ১২ জনের প্যানেলের।

একই সঙ্গে ইফতেখার রহমান মিঠু পরিচালক প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তার হাতে রয়েছে অনেক ভোট। লুৎফর রহমান বাদল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও তার নাম থাকছে প্রার্থীতায়। সরে দাঁড়িয়েও তাই জিতে যেতে পারেন এই সংগঠক। ইফতেখার কোনো পক্ষেরই নন, এ কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরছেন না। তারও জয় পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। নামমাত্র প্রার্থী হওয়া রাকিব উদ্দিন এবং একেএম আহসানুর রহমান মল্লিক রনি প্যানেল থেকে বাদ পড়ছেন। ইশতিয়াক সাদেক-ফারুক আহমেদের প্যানেলকে জয়ী করার জন্য হাসিমুখে তারা হার বরণ করে নিতে রাজি। এর আগে শনিবার রাতে মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সরে দাঁড়ান। সাদেক-ফারুক প্যানেলের ১২ জনের মধ্যে অন্যরা হলেন-আদনান রহমান দীপন, ফায়াজুর রহমান, আবুল বাশার, আমজাদ হোসেন, শাহনিয়ান তানিম, মোহাম্মদ মুকছেদুল কামাল, মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান ভূঞা, এম নাজমুল ইসলাম, মো. মনজুর আলম ও মেহরাব আলম চৌধুরী। তবে ইফতেখার ও লুৎফুর রহমান হিসাব পালটে দিতে পারেন।

নির্বাচনের আগে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ, এরপর আপিল বিভাগে শুনানি সব মিলে চলছিল আইনি দড়ি টানাটানি। অবশেষে রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব জানান, ‘নির্বাচনে আর কোনো স্থগিতাদেশ থাকছে না, নির্বাচন হোক।’ ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরা ভোটাধিকার পাবেন। ঢাকার ১৫টি ক্লাবের পক্ষে সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া রিট করেছিলেন।

এদিকে কাল ক্লাব সংগঠকরা স্মারকলিপি দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর, নির্বাচন স্থগিত ও নতুন তফশিল ঘোষণার দাবিতে। স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছেন। আমিনুল ইসলাম সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে সাহায্য করেছেন, কোনো প্রভাব খাটাননি। তিনি তো নিজেই রাত-বিরাতে মাঠে ছিলেন যাতে নির্বাচন হয়।’ তিনি বলেন, ‘যে এখানে আসছে না বা বয়কট করেছে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে যাচ্ছি। এর বাইরে কোনো কথা বলব না।’ ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে কাল নাম প্রত্যাহার করেছেন জামালপুরের কাউন্সিলর এসএম আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান।

বিকালে সংবাদ মাধ্যমকে রেদুয়ান বলেন, ‘আমি যে নির্বাচন করছি আমাকে ভোটারদের নাম্বারও দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। কারা কাউন্সিলর আছেন তাদের অনেককে চিনতে পারিনি। আমি দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনে আছি। সংগঠক হিসাবে আছি। এটা আমার নেশা, ভালো লাগা। কিন্তু এই নোংরামির মধ্যে আর থাকতে পারছি না। এই মুহূর্তে সরে গেলাম।’

জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে গঠিত ক্যাটাগরি-১ থেকে নির্বাচিত হবেন ১০ জন পরিচালক। ছয়জন এরইমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। খুলনা বিভাগ থেকে আগেই পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও সাবেক নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক এবং জুলফিকার আলী খান। বরিশাল বিভাগ থেকে ভোলার শাখাওয়াত হোসেন এবং সিলেটের রাহাত সামসও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন সংগীতশিল্পী কুমিল্লার আসিফ আকবর ও আহসান ইকবাল চৌধুরী। এই ক্যাটাগরিতে দেশের ৬৩ জেলা ও আটটি বিভাগের কাউন্সিলররা দশজন পরিচালক নির্বাচিত করেন। নির্বাচন হওয়া বিভাগগুলোর মধ্যে ৩৫ জন ভোট দিতে পারবেন, তাতে ১৯টি পোস্টাল ভোট রয়েছে।

ক্লাব বা ক্যাটাগরি-২ থেকে ১২ জন পরিচালকের মধ্যে ব্যালটে থাকছে ১৭ জনের নাম। তাদের ভোট দেবেন ৭৬ জন ক্লাব কাউন্সিলর। এরমধ্যে পোস্টাল ভোট রয়েছে ৩৪টি। যদিও দু’জন নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। ক্যাটাগরি-৩ এ লড়াই হবে খালেদ মাসুদ পাইলট ও দেবব্রত পালের মধ্যে। এখানে ৪৫ ভোটের মধ্যে পোস্টাল ভোট পাঁচটি। বাকি দু’জন পরিচালক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনীত হবেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More