মুজিবনগর প্রতিনিধি:বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন–২০১২ যেখানে ময়না, টিয়া, কাকাতোয়া ও বিদেশি প্রজাতির পাখিকে খাঁচায় বন্দি রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে—সেই আইনই লঙ্ঘিত হলো সরকারি আয়োজনেই। মেহেরপুরের মুজিবনগরে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলায় খাঁচাবন্দি পোষা ময়না, টিয়া ও অন্যান্য পাখির প্রকাশ্য প্রদর্শনী দেখে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় সচেতন মহল।
২৬ নভেম্বর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়—অবৈধ বন্যপ্রাণী বিক্রেতাদের জন্য বরাদ্দ ছিল আলাদা একটি বড় স্টল। সেখানে নির্বিঘ্নে প্রদর্শিত হয়েছে বহু খাঁচাবন্দি পাখি। বরং খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে ফটোসেশনে ব্যস্ত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাংবাদিকরাও। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার বদলে দৃশ্যটি যেন সরকারি সুযোগেই আইনভঙ্গের পাঠশালা।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, যাঁদের দায়িত্ব আইন বাস্তবায়নের, তাঁরাই যখন আইনের ব্যত্যয় ঘটান, তখন সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। এতে বন্যপ্রাণী রক্ষার প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মেলার উৎসবমুখর পরিবেশের আড়ালে এখন উঠছে তীব্র আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন। সরকারের বন্যপ্রাণী রক্ষার প্রচার–সচেতনতাই যেন মেলাঙ্গনের খাঁচায় বন্দি পাখিদের সঙ্গে হারিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হারিসুল আবিদ বলেন, “এগুলো নিষিদ্ধ এইভাবে বললে হবে না। পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে আইনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।” এরপর তিনি আর কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন।
অন্যদিকে মেহেরপুর জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা এইচ টি হামিম হায়দার কালবেলা’কে বলেন, “শালিক, ময়না, টিয়া, কাকাতোয়া—এসব দেশীয় পাখি খাঁচায় সংরক্ষণ বা পোষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয়। বিদেশি পাখি ব্যবসা বা পোষার জন্য ওয়াইল্ডলাইফ ডিভিশন থেকে লাইসেন্স লাগে, যা মেহেরপুর জেলায় কারও নেই। প্রাণিসম্পদ মেলায় এ ধরনের প্রদর্শনী সম্পূর্ণ অবৈধ।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “বন্য প্রাণী আমাদের মেলায় আনা যাবে না। তবে কেউ যদি ২/১টি পোষা পাখি নিয়ে আসে, সেখানে সমস্যা নেই।” তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হলে—আইনের তপশিল–১–এ টিয়া, ময়না, কাকাতোয়া খাঁচায় আবদ্ধ করে পোষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ—তিনি বলেন, “আমাদের পাঁচটা ক্যাটাগরি ছিল—গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি। যদি আইন অমান্য করে কেউ দুই-একটি বন্য পাখি নিয়ে এসে থাকে, সেটা তারা তাদের নিজ দায়িত্বে এনেছে।”
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—নিষিদ্ধ বন্য পাখি সরকারি প্রদর্শনীতে স্টল পেল কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
সরকারি তত্ত্বাবধানেই এমন প্রকাশ্য আইনভঙ্গের ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। সচেতন মহলের মতে, এই অবহেলা শুধু আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাই নয়—এটি বন্যপ্রাণী রক্ষার জাতীয় প্রচেষ্টাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.