মেহেরপুর অফিস: নতুন নতুন জাতের ফলের চাষ এবং লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরে ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। উপযুক্ত আবহাওয়া ও মাটি থাকায় ফল চাষে ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। ধান, গম বা প্রচলিত ফসলের বদলে এখন জেলার অনেক কৃষক ঝুঁকছেন ফলবাগান তৈরির দিকে। দেশি ফলের পাশাপাশি ড্রাগন, মাল্টা, স্ট্রবেরি, আঙ্গুর, বাউকুলসহ উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফলও চাষ হচ্ছে মেহেরপুরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, ফল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ৮৬৮ হেক্টর জমিতে ফল চাষ হচ্ছে, যা এক দশক আগেও ছিল প্রায় ৬ হাজার হেক্টর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৬ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছিল, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ হেক্টরে। কলার আবাদ ২০২২–২৩ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৫২৬ হেক্টর, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে হয় ২ হাজার ৫৯০ হেক্টর। লিচুর আবাদ ২০২২–২৩ অর্থবছরে ছিল ৭১৫ হেক্টর, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৭২৫ হেক্টর। তবে চলতি বছর আমের বাগানে কিছুটা হ্রাস পাওয়া গেছে। গত বছরের তুলনায় ৫ হেক্টর জমিতে কম হয়েছে আমের আবাদ। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফল চাষে লাভ বেশি এবং পরিচর্যার ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ায় তারা ফলের বাগান গড়ছেন। অন্যদিকে, ধান ও গমের মতো মরসুমি ফসল বারবার আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ফলগাছ দীর্ঘস্থায়ী ও সহনশীল হওয়ায় চাষিরা ফলের দিকেই ঝুঁকছেন। মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, ‘আমি আগে ধান ও গম চাষ করতাম। গত চার বছর ধরে ছয় বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা চাষ করছি। এখন সেখান থেকে ভালো আয় হচ্ছে।’ চাষি জাহির হোসেন বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে ড্রাগনের বাগান করেছি। পাশাপাশি তিন বিঘা আমের বাগান থেকে বছরে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হয়।’ আমঝুপি গ্রামের চাষি কবির হোসেন জানান, ‘চলতি বছর ছয় বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেছি। আশা করছি, আগামী বছর বিক্রি করতে পারবো।’ মেহেরপুরে ফল চাষ এখন আর বিকল্প চাষ নয়, বরং এটি কৃষকদের আর্থিক মুক্তির নতুন পথ হয়ে উঠছে। টেকসই কৃষির অংশ হিসেবে ফল বাগান সম্প্রসারণের দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য জেলার জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। তবে নতুন ফলের চারা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হওয়ায় সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। তারা জানান, রোগবালাই সম্পর্কিত সঠিক পরামর্শ, প্রণোদনা, প্রদর্শনী প্লটের সঠিক বণ্টন এবং সহজ শর্তে কৃষিঋণ পেলে ফল চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে। চারা উৎপাদন ও বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘বন্ধন নার্সারির’ মালিক দীপ সাহা বলেন, ‘‘বিদেশি ফলের চারার চাহিদা এখন অনেক বেশি। নিয়মিত ড্রাগন, মাল্টা, আঙ্গুরের মতো ফলের চারা অর্ডার দিচ্ছেন চাষিরা। অনেকে টবেও এসব ফল চাষ করছেন।’ মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামসুল আলম জানান, ‘ফল বাগান বাড়াতে প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও কম সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। অনেক এলাকায় কৃষকদের ফলদ গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.