কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ আর নেই

মাথাভাঙ্গা মনিটর: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। কোলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ৩১ জুলাই থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশিষ্ট সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বুদ্ধদেব গুহকে গড়পরতা বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের পরিচিত ফর্মার ছাঁচে ফেলা যাবে না। থিয়েটার করেছেন। ছবি এঁকেছেন। সংগীতের চর্চায় দিয়েছেন জীবনের অনেকটা সময়, সেই ছেলেবেলা থেকে। বাংলা পুরাতনী ও টপ্পাসহ বিভিন্ন সংগীতেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। খুব ভালো শিকারিও ছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। ছিল জঙ্গলের নেশা। নিজেকে ‘জংলি’ বলতে ভালোবাসতেন। পূর্ব ভারতের প্রকৃতি এবং অরণ্যের প্রতি প্রেম তার লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষের ভালোবাসা, নারী-পুরুষের প্রেম তার লেখায় আধুনিক ও জীবন্ত হয়ে দেখা দিয়েছে। এই বহুমুখী বর্ণময় জীবনের নেপথ্যে ছিল প্রাণশক্তি। তার রঙিন মন আমৃত্যু ফিকে হয়ে যায়নি। বুুদ্ধদেব গুহর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন। তার সহধর্মিণী ছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ঋতু গুহ। বুদ্ধদেব গুহ তার শৈশবের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশের বরিশাল, রংপুর, জয়পুরহাটে। বরিশাল জেলা স্কুলেও পড়েছেন তিনি। এরপর কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। ৩৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর করোনামুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তবে এবার আর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা হলো না তার। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার পাশাপাশি বুদ্ধদেবের মূত্রনালিতে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এ ছাড়া তার লিভার ও কিডনিতেও সামান্য সমস্যা ছিল। ফের কোভিড পরীক্ষা করা হলেও তাতে সংক্রমণ ধরা পড়েনি। দৃষ্টিশক্তির সমস্যাসহ বুদ্ধদেব বয়সজনিত নানা সমস্যাতেও ভুগছিলেন। বর্ষীয়ান সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ বহু কালজয়ী উপন্যাসের স্রষ্টা। বুদ্ধদেব গুহর প্রথম উপন্যাস ‘জঙ্গল মহল’। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘অববাহিকা’, ‘বাবলি’, ‘পঞ্চপ্রদীপ’, ‘কুমুদিনী’, ‘কুসুম’, ‘বাতিঘর’, ‘ভাবার সময়’, ‘নিবেদন’, ‘পরিযায়ী’, ‘চাপরাশ’, ‘রাগমালা’, ‘হাজারদুয়ারী’, ‘আয়নার সামনে’, ‘অবন্তিকা’, ‘বইমেলাতে’, ‘বাসনা কুসুম’, ‘চন্দ্রায়ন’, ‘বনবাসর’, ‘সাজঘর’। কিশোরসাহিত্যেও ছিল তার অবাধ বিচরণ। তার সৃষ্ট ঋজুদা বা ঋভুর মতো চরিত্র পাঠকদের কাছে সমান জনপ্রিয়। তার বহু গল্প-উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। তার লেখা ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’কে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে পুরস্কারজয়ী বাংলা সিনেমা ‘ডিকশনারি’। ‘হলুদ বসন্ত’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি পান আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা। কিশোরসাহিত্যেও তার অবদান অনস্বীকার্য। তার সৃষ্ট ‘ঋজুদা’ বা ‘ঋভু’র মতো চরিত্র আকৃষ্ট করে রেখেছে কয়েক প্রজন্মের বহু কিশোর-কিশোরীর মনকে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More