চুয়াডাঙ্গায় সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে খুচরা বিক্রেতার কাছে সার বিক্রি

অধিক দামে কিনে পাচারকালে সার বোঝাই লাটাহাম্বার ও পাখিভ্যান আটক
স্টাফ রিপোর্টার: অধিক দামে কিনে পাচারের সার বোঝাই লাটাহাম্বার ও পাখিভ্যান আটক করেছে স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পৃথক স্থান থেকে সার উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রাম থেকে লাটাহাম্বারসহ (স্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন) ৮০ বস্তা বিএডিসির টিএসপি সার এবং লাটাহাম্বারের চালক মিলন হোসেনকে আটক করা হয়। ওই সার জীবননগর উজেলার উথলী থেকে অধিক মূল্যে কিনে অন্যত্র পাচার করা হচ্ছিলো বলে জানা গেছে। রাত ৮টার দিকে একই উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রাম থেকে পাচারকালে আরও ৩০ বস্তা সার আটক করে স্থানীয়রা। পরে মুচলেকা নিয়ে ওই সার ডিলারকে ছেড়ে দেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। জব্দ করা সার পুনরায় পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট ডিলারের গুদামে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলার উথলী বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়া অধিক মূল্যে সার কিনে অন্য উপজেলায় নিয়ে যাবার সময় ওই সার আটক করেছেন দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রাম থেকে একটি লাটাহাম্বারসহ (স্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন) অধিক মূল্যে ক্রয় করা ৮০ বস্তা বিএডিসির টিএসপি সার এবং লাটাহাম্বারের চালক মিলন হোসেনকে আটক করা হয়। আটককৃত ওই টিএসপি সার আজ (মঙ্গলবার) জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করা হবে। সরকারি নিয়মানুযায়ী বিএডিসির ডিলাররা এক উপজেলার সার কোনোভাবেই অন্য উপজেলায় বিক্রি করতে পারবেন না। সরকারের এ নির্দেশনাকে অমান্য করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ওই ৮০ বস্তা টিএসপি সার অন্য উপজেলার খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার আমঝুপি গ্রামের মো. খোদা বকশোর ছেলে মিলন হোসেন জীবননগর উপজেলার উথলী বাসস্ট্যান্ড মোড়ের একটি দোকান থেকে সোমবার দুপুরে অধিক মূল্যে ৮০ বস্তা টিএসপি সার কেনেন। এরপর ওই সার লাটাহাম্বারে করে দামুড়হুদা উপজেলার ভগিরথপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। খবর পেয়ে সার বোঝাই ওই লাটাহাম্বার আটক করা হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, আটককৃত ওই লাটাহাম্বারের চালক মিলন হোসেন স্বীকার করছেন তিনি বিএডিসির ৮০ বস্তা টিএসপি সার উথলী বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে কিনেছেন এবং ওই সার ভগিরথপুর গ্রামে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, আটককৃত সার মঙ্গলবার জীবননগরে নিয়ে আসা হবে। তিনি আরও জানান, কোনোভাবেই এক উপজেলার বরাদ্দকৃত সার অন্য উপজেলায় বিক্রি করার সুযোগ নেই। যে ডিলার অবৈধভাবে অন্য উপজেলায় সার বিক্রি করেছে তদন্ত করে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার উথলী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলার রয়েছে দু’জন। উথলী গ্রামের মো. জহির উদ্দীনের নামে একটি এবং তার স্ত্রী নাসিমা খাতুনের নামে রয়েছে একটি ডিলার। সার আটকের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এলাকাবাসী ধারনা করছেন বিএডিসির অনুমোদিত সার ডিলারের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে সারগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলার জহির উদ্দীনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়া অধিক মূল্যে সার বিক্রি করা, সারের বিক্রয়মূল্য প্রকাশ্যে না টাঙানো, সার বিক্রয়কারীদেরকে মেমো না দেয়া এবং গোডাউনে সার মজুদ থাকলেও কৃষকদের কাছে সার নেই বলে বিক্রি না করা। এ সমস্ত অভিযোগের কারণে জহির উদ্দীনের নামে এর আগে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক কৃষক জানান, বর্তমান আমন মৌসুমে ভুট্টা, কলা, ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য এলাকায় টিএসপি সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলার এলাকার সার অন্যত্র বিক্রি করায় সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। এ কারণে অধিকাংশ সময় বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলার জহির উদ্দীনের কাছে সার না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়।
এদিকে এলাকাবাসী বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদার বেড়বাড়িতে গোপনে বিক্রির সময় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) ৩০ বস্তা সার জব্দ করেছেন এক ইউপি সদস্য ও স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের বেড়বাড়ি গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। পরে মুচলেকা নিয়ে ওই সার ডিলারকে ছেড়ে দেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। জব্দ করা সার পুনরায় পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট ডিলারের গুদামে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল রাতে দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের বেড়বাড়ি গ্রামের আক্তারুল ইসলামের গুদামে দুটি পাখিভ্যানযোগে নিয়ে যাওয়ার সময় বিসিআইসির ৩০ বস্তা সার জব্দ করেন ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মতিয়ার রহমান ও স্থানীয়রা। সার ডিলারের এমন কর্মকা-ে ক্ষোভে উত্তেজিত হন সাধারণ মানুষ। পরে খবর দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও পুলিশকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। উপস্থিতিদের সামনে ভুল স্বীকার করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে মুচলেকা দেন সার ব্যবসায়ী আলিম উদ্দীন। সরকারি সার গোপনে বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, নতিপোতা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স শাহিন আক্তার। আলিম উদ্দিন সার ডিলার হিসেবে সার বিক্রি করেন। বিসিআইসি সার ডিলারদের প্রতি কেজি ইউরিয়া ১৬ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকা এবং এমওপি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। কিন্তু মেসার্স হাসান টেডার্সের মালিক আলিম উদ্দিন তার চেয়ে বেশি দরে সার বিক্রি করছেন। কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার ও বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের স্বল্প মূল্যে সার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন সার ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিন। প্রতিবাদ করলে সার নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ সার ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের দাবি কৃষকদের।
নতিপোতা ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, সার ডিলার মেসার্স শাহীন আক্তার, তিনি নতিপোতার বেড়বাড়ী গ্রামের মেসার্স হাসান ট্রের্ডাসের স্বত্বাধিকারী আলিম উদ্দীনের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত সারগুলো বিক্রি করে আসছেন। গতকাল রাত আনুমানিক ৮টার দিকে অবৈধভাবে আলিম উদ্দীনের গোডাউন থেকে ৩০ বস্তা সার বেড়বাড়ীর আক্তারুলের নিকট অবৈধভাবে বিক্রি করেন। এসময় আমি ব্যক্তিগত কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় সার বোঝায় পাখিভ্যান দুটির গতিরোধ করি। সময় আমি গাড়ী দুটির গতিরোধ করে গাড়িতে থাকা দুজনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, হাসান টেডার্সের আলিমের দোকান থেকে সারগুলো আক্তারুলের দোকানে নিয়ে যাচ্ছি। সেসময় আমি নতিপোতা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসানকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবগত করি। পরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়ে আলিম উদ্দীনের কাছ থেকে একটি মুচলেকা নেন।
মেসার্স হাসান টের্ডাসের মালিক আলিম উদ্দীনের সাথে মোবাইল ফোনে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সাথে সাথেই ফোনটি কেটে দেন। এরপর একাধিক বার তাকে কল করেও তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, ৩০ বস্তা সার আলিমের গোডাউন থেকে বাইরে যাচ্ছিলো। স্থানীয়রা তা আটক করে। খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছে জানতে পারি যে সারগুলো ইউনিয়নের ভেতরেই থাকছে। তবে সরকারি শর্ত হচ্ছে বিসিআইসির ডিলার ৫০ ভাগ সার খুচরা বিক্রেতা ও ৫০ ভাগ কৃষকদের মাঝে বিক্রি করতে পারবে। ডিলার শাহীনের সারগুলো মেসার্স হাসান টের্ডাসের আলিমের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। সার অপসারণের বিষয়ে না জানানোর জন্য তার কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, স্থানীয়রা সারের গাড়ী আটক করার পর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওখানে উপস্থিত হন। পরবর্তীতে ওই সার ব্যবসায়ী এ ধরণের ভুল আর না করে সেজন্য তাকে সর্তক করে মুচলেকা নেয়া হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More