ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে আরও যত অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওই হলের আরও অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ওই হলের চার শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে খারাপ আচরণ ও দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, সানজিদা চৌধুরী খুবই ‘বিপজ্জনক’। তিনি হলের প্রাধ্যক্ষকেও পাত্তা দিতেন না। গত রোববার দিবাগত রাতে হলে নবীন এক ছাত্রীকে নির্যাতনের পর ধীরে ধীরে সানজিদার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার ওই হলের তিনজন আবাসিক শিক্ষার্থী ও সদ্য পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় অবস্থান করা এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিনিধির কথা হয়েছে। তাদের কথায় ছাত্রলীগ নেতা সানজিদা চৌধুরীর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপমান-অপদস্থ করার চিত্র উঠে এসেছে।

অভিযোগকারী চারজনের মধ্যে তিন মাস আগে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় চলে যাওয়া ওই হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী মুঠোফোনে বলেন, তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর হলে ছিলেন। তিন-চার মাসে তিনি (সানজিদা) তার সঙ্গে একটা বিষয়ে তর্ক করেছিলেন। একপর্যায়ে হলে তার বিভিন্ন ঘটনার ধারণ করা অডিও ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি সব সময়ই অন্যান্য ছাত্রীর অডিও-ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিতেন। এ জন্য সবাই তাকে ভয় পান। হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যক্তিগত একটি বিষয় নিয়ে সানজিদা আমাকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে বন্ধুদের সামনে অপমান করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, আমার বাড়িতে মায়ের কাছে ফোন করে আমার সম্পর্কে বাজে কথা বলেছিলেন। এতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। সানজিদা হলসহ আমার বিভাগের সবার কাছে আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছেন। এর পর থেকে সবাই আমাকে বাকা চোখে দেখেন। একপর্যায়ে আমি একা হয়ে যাই। কাউকে আমার সঙ্গে মিশতে দেন না। সানজিদা বিপজ্জক। তিনি অনেক কিছু করতে পারেন। এ জন্য ভয়ে কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করেন না। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার পর ছাত্রীরা সোচ্চার হচ্ছেন।’ ওই হলের আরেক ছাত্রী বলেন, হলে দাপট দেখাতেন সানজিদা। নেতা হওয়ার পর সেই দাপট বেড়ে কয়েক গুণ হয়ে যায়। তার অনুসারী ১৫ থেকে ২০ জন হলের নিয়ন্ত্রণ নেন। গত রোববার ঘটনার পর সোমবার দিবাগত গভীর রাতে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বাইরে বের করে নিয়ে যান সানজিদা। গত মঙ্গলবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা সানজিদা চৌধুরীর সঙ্গে এসব অভিযোগের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল। ওই সময় সানজিদা বলেছিলেন, ‘আমি হলে ভালো কাজ করি। আবাসিক শিক্ষার্থীদের আপদে-বিপদে এগিয়ে যাই। এ জন্য হল প্রভোস্ট আমাকে কিছু কাজ দিয়ে থাকেন। আমার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুল আলম বলেন, ১৪ মাস ধরে তিনি এই হলের দায়িত্বে আছেন। আগে কখনো কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ কোনো অভিযোগও দেয়নি। কোনো ছাত্রীকে কোনো কাজের দায়িত্বও দেয়া হয় না। কারও কথায় প্রশাসন চলে না। যারা বলছে তারা ঠিক বলছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, সানজিদার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সানজিদার বিষয়ে আরও খোঁজখবর নিতে বলেছেন। সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সেটা তদন্ত সাপেক্ষে। যেহেতু তদন্ত চলছে, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত সানজিদার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More