চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নীতিমালার বহির্ভূত উল্লেখ করে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নীতিমালার বহির্ভূত উল্লেখ করে শিক্ষক- কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। গতকাল বুধবার সকালে কলেজ চত্বরে পৌঁছিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরকলেজের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী নীতিমালা বর্হিভুত নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং যৌক্তিক আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন। শুধু তাই-ই নয় চুয়াডাঙ্গা পৌরকলেজ সহ শহরের অন্যদুটি সরকারি কলেজের অনেক শিক্ষক-অভিভাবক, শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তিবর্গ এ যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, আজকে যাকে (শামীমা সুলতানাকে) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের পাঁয়তারা করা হচ্ছে ২০১৭ সালে এই শামীমা সুলতানার কারণেই চুয়াডাঙ্গা শহরের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে নেমে এসেছিলো অমানিশা অন্ধকার। যা ২০১৭ সালের ১২ মার্চ দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকাসহ স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে বছর চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে ছিলো এইচএসসি (ইন্টারমিডিয়েট) পরীক্ষার কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক শামীমা সুলতানার একচোখা ও পক্ষপাত দুষ্টনীতি বহির্ভূত ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর দেয়ার কারণে চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীরা পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে এ প্লাস মার্সকস থেকে বঞ্চিত হয়। যার কারণে সে বছর চুয়াডাঙ্গার মেধাবী শিক্ষার্থীরা বুয়েটসহ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার ফরম পর্যন্ত তুলতে পারেনি। সে সময় ভুক্তভোগী সে সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শামীমা সুলতানার বিরুদ্ধে মাউশি ও শিক্ষাবোর্ড থেকে একাধিক তদন্ত হয়েছিলো। সেই তদন্তের ফলাফলে পক্ষপাতমূলকভাবে শামীমা সুলতানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলেও চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন হয়ে চলে যায় চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজে। সেই দুঃসহ স্মৃতি অনেক অভিভাবক রোমন্থন করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের দাবি যাকে (শামীমা সুলতানা) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, প্রশাসনিক ক্ষমতা হাতে পেলেই সেই পুরানো হিংস্র সিংহ আবারও গর্জে উঠবে। এই তথ্য জানার পর চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের অনেক শিক্ষার্থী যারা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছিলো তাদেরকে বলতে শোনা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই যুগে শামীমা সুলতানাদের মত শিক্ষকরা আর যাতে কোনভাবেই প্রশাসনিক ক্ষমতা হাতে না পায় সেই ব্যবস্থায় করতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলনের মাত্রা আরো বাড়ানো হবে।
এদিকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় কলেজে মানববন্ধন করা করা হয়। এরপর দুপুর ১২টায় পদ বঞ্চিত সহকারী অধ্যাপক মোসা: নাজনীন আরা খাতুনের সমর্থনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদানকালে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য যেটা পারফেক্ট হবে সেটাই করা হবে। কে আন্দোলন করলো, তালা ঝুলালো, মানববন্ধন করলো সবই আমরা শুনেছি। নীতিমালা পর্যালোচনা করেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রয়োজনে আবারো নীতিমালা পর্যালোচনা করা হবে। প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল যাতে হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে যোগ্য ব্যক্তিকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী পদ বঞ্চিত সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) মোসা: নাজনীন আরা খাতুনসহ চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষিক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলেন, তাদের দাবী মানা না হলে আরো বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ক্লাস বর্জন, অধ্যক্ষ ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়া ও অভিভাবক শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এডহক কমিটির সভায় নীতিমালা বহির্ভূতভাবে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে শামীমা সুলতানাকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পর চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের বিএম শাখার সহকারী অধ্যাপক মোসা: নাজনীন আরা খাতুনসহ অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীরা বিধি বহির্ভূত নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন। একই সাথে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি তোলে। প্রতিবাদের অংশ হিসাবে গত মঙ্গলবার রাত ৮টায় চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষে ও ক্লপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পদ বঞ্চিত শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দের দাবি অবিলম্বে এই বিধি বহির্ভূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হলে বড় ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সদ্য (১২-০২-২০২৫) অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ আবু রাশেদ বলেন, গভর্নিং বডি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কার্যকর করবো। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে মাউসি এক ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আর এক ধরনের আখ্যা দিচ্ছে। সেই সূত্রধরে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী যে সকল বিষয়গুলো অ্যাফিলিয়েটেড সেই সকল এফিলেশন বিষয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে সিনিয়ারিটির ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকের দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, মাউসির নীতিমালা অনুসারে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ক্ষেত্রে যিনি সিনিয়র তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে হবে।
এদিকে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ মো. আবু রাশেদের মাধ্যমে শামীমা সুলতানার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেয়ার রেজুলেশনটি যেকোনো ভাবে করে, তা কার্যকর করে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে। কিন্তু অবসরে যাওয়ার পর রেজুলেশন বহিতে সাবেক অধ্যক্ষ আবু রাশেদ স্বাক্ষর করতে পারবেন কি-না সে বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
অপর একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের (গর্ভানিং বডি) অ্যাডহক কমিটির একজন বিদ্যুৎসাহী সিনিয়র সিটিজেন অন্তঃরালে কলকাঠি নেড়ে বিধি বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বৈধতায় রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More