দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদীতে ম্যাজিক জাল ও কোমর দিয়ে মাছ শিকার

নদী হারাচ্ছে নব্যতা নিধন হচ্ছে মাছের পোনা : বাঁধ অপসারণ দাবি

হাসমত আলী: চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র স্রোতঃস্বিনী মাথাভাঙ্গা নদীকে হৃদপিন্ড বলা হয়ে থাকে। পদ্মার শাখা নদী মাথাভাঙ্গা কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রবেশ করেছে খরস্রোত নদী। যার দীর্ঘ প্রায় ৫২ কিলোমিটার এই নদীর দামুড়হুদা উপজেলার মধ্যেই শতাধিক অবৈধ কোমর দিয়ে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ে এখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলছে। স্রোতঃস্বিনী মাথাভাঙ্গা নদীতে কারেন্টজাল ও কোমর দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে নব্যতা হারাচ্ছে নদী, হচ্ছে ভরাট, নিধন হচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন ধরনের মাছের পোনা। এখনই ব্যবস্থা না হলে মাছশূন্য ও ভরাট হয়ে যাবে মাথাভাঙ্গা নদী। এ অঞ্চলের একমাত্র নদী মাথাভাঙ্গা। এ নদীতে একশ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবীরা কারেন্টজাল ও কোমর দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে। গাছের ডালপালা দিয়ে কোমড় তৈরি করে মাছ শিকারের ফলে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে স্রোত, যেখানেই স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেখানেই পড়ে পলিমাটি, যে কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। একদিন হয়তো এই নদীটি স্রোতহীন মরা নদীতে পরিণত হয়ে পড়বে। অন্যদিকে কারেন্টজাল দিয়ে মাছ শিকারের সরকারের কড়া নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না অসাধু মৎস্যজীবীরা। প্রতিদিন কারেন্টজাল দিয়ে মাছ শিকার ফলে নিধন হচ্ছে গলদা চিংড়ি মাছের পোনাসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ। এলাকাঘুরে দেখা গেছে, জয়নগর থেকে শুরু করে গলাইদড়ি ঘাট হয়ে আমডাঙ্গা এবং সুবলপুর, রঘুনাথপুর, পাটাচোরা থেকে দামুড়হুদার বাস্তপুর পর্যন্ত অসংখ্য কোমর দেয়া হয়েছে নদীতে। এ কোমর দেয়ার কারণে নদী হয়ে পড়ছে অপরিচ্ছন্ন। কোমর উচ্ছেদের ব্যাপারে মৎস্য অফিস কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন বাড়ছে কোমরের সংখ্যা। এলাকাবাসীর দাবি ঐতিহ্যবাহী মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতে কোমর স্থাপনকারী ও কারেন্টজাল দিয়ে অসাধু মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এ নদী বাঁচাতে অতীতে সাবেক জেলা প্রশাসকগণ চুয়াডাঙ্গার একমাত্র হৃদপিন্ড মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাথে একত্তা ঘোষণা করে কোমর ও মাথাভাঙ্গা দূষণমুক্ত ও উচ্ছেদ করতে পানিতে নেমেছেন। এ কাজে সহযোগিতা করছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দসহ জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসারবৃন্দ এবং সুধীজন। সকলের প্রচেষ্ঠায় ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন থেকে কোমর অপসারণ কাজ শুরু হয়। মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে নিরাপদ জায়গা দরকার। কিছু অসাধু মানুষ নির্বিচারে মাছ নিধনে মেতে উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙ্গা নদী বাচাঁও আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, নদী রক্ষায় প্রশাসনের যেটুকু দায়িত্ব সেটুকু পালন করুক। সরকারি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। সাধারণ জনগণের সচেতন হতে হবে। নদীর ভেতর বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে মাইকিং করে কোমর দেয়া বন্ধ করতে হবে। প্রশাসন আমাদেরকে প্রতিবছরই সার্বিক সহযোগিতা করছে। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, কোমর অপসারণের কাজ আমাদের আইনি পড়ে না। তবে কারেন্ট জাল দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথী মিত্র বলেন, ইতিমধ্যেই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য অফিসারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাথাভাঙ্গা নদীতে যে সমস্ত কোমর আছে; সেগুলো দ্রুত অপসারণ করবো। যাতে কোমর ও কারেন্টজাল দিয়ে মাছ ধরতে না পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More