অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সক্রিয় করছে ভারত-পাকিস্তান আরও বড় হামলার পরিকল্পনা : সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি

স্টাফ রিপোর্টার: গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে চলা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আরও তীব্রতর হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন। কারণ পরস্পরকে বড় মাপে আঘাত হানার জন্য এরই মধ্যে দুই পক্ষ তাদের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রগুলো সক্রিয় করেছে। এদিকে প্রতি রাতের মতো গতকালও সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা দুই দিনে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। আর ভারত দাবি করেছে, ভোররাতে তারা পাকিস্তান সীমান্তের ভিতরে থাকা একটি সামরিক চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশচেষ্টার সময় বিএসএফের গুলিতে সাত জঙ্গি নিহত হয়েছে। বিএসএফের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল ভোরের আগে একদল ‘জঙ্গি’ ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের ঠেকিয়ে দেয়া হয়। এ সময় গুলিতে সাত জঙ্গি নিহত হয়। ভারতীয় সূত্র জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ড্রোন, অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার রাত ও গতকাল ভোরের আগে ভারতের পশ্চিম সীমান্তজুড়ে হামলা চালিয়েছে। তবে তা প্রতিহত করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, রাতভর পাকিস্তানি সেনারা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে ‘অগণিতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে’। এ সময় বিএসএফ অন্তত সাত সন্ত্রাসীকে হত্যা এবং ধানদারের পাকিস্তানি চৌকি ধ্বংস করে দেয়। ভারতীয় বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, উরি এলাকায় গতকাল পাকিস্তান গোলাবর্ষণ করেছে। গোলায় বেশ কয়েকটি ঘরবাড়িতে আগুন ধরে যায় এবং সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাতভর গোলাবর্ষণে এক নারী নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। জম্মুর শের-ই-কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি অব অ্যাগ্রিকালচার, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী আনসাব জানান, তিনি রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এর মধ্যে ৪টার দিকের বিস্ফোরণ ছিল ‘ব্যাপক ভয়াবহ ও বিকট শব্দের’। দুই থেকে তিন মিনিট ধরে এ বিকট শব্দ শোনা গেছে, জানালাগুলো এমনভাবে কাঁপছিল যেন ভেঙে যাবে। চারপাশ ধোঁয়াটে হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী গত রাতে ভারতের বিভিন্ন অবস্থানের দিকে প্রায় ৫০০ ড্রোন প্রেরণ করেছে। লাদাখের সিয়াচেন বেস ক্যাম্প থেকে গুজরাটের কচ্ছ পর্যন্ত ২৪টি স্থানে এ ড্রোনগুলো দেখা গেছে। এ ড্রোনগুলোর মধ্যে প্রায় ৫০টি ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা বন্দুকের সাহায্যে ধ্বংস করা হয় এবং প্রায় ২০টি ‘সফট কিল’ পদ্ধতিতে নামানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ ড্রোন অস্ত্রবিহীন ছিল এবং এগুলোর সঙ্গে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল, যা সম্ভবত তাদের স্থল স্টেশনে ফুটেজ প্রেরণ করছিল।
এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে বৃষ্টির মতো ড্রোন হামলার কথা বলা হলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান। এমনকি দেশটির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়নি।
ভারতের সেনাবাহিনী দাবি করছে, ‘পাকিস্তান ভারতশাসিত কাশ্মীরের উধমপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটের তিনটি সামরিক স্থাপনায় গতকাল ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।’ ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ওইসব হামলার ফলে তাদের কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং হামলাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের এ অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ‘ভারতশাসিত কাশ্মীরে কোনো হামলার দায় তার দেশের নয়।’
এদিকে নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পিটিভি ও ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী এ পর্যন্ত মোট ৭৭টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৯টি এবং সারা রাতে আরও ৪৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ভারতের ৩০টি হরপ ড্রোন প্রতিহত ও ধ্বংস করেছে। পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার উদ্দেশ্যে ড্রোনগুলো পাঠানো হয়েছিল। পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, রাওয়ালপিন্ডি, গুজরাট, গুজরানওয়ালা, লাহোর, নানকানা, ঘোটকি, করাচির মালিরসহ বিভিন্ন শহরে ড্রোনগুলো দেখা গিয়েছিল। পরে সেগুলো ভূপাতিত করা হয়। পাকিস্তানের আইএসপিআর বলছে, বুধবার পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতীয় উড়োজাহাজ, ড্রোন ও সীমান্তচৌকি ধ্বংস হওয়ায় দিল্লি এ ড্রোন হামলার চেষ্টা চালিয়েছে।
এদিকে টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ হরপ ড্রোন তৈরি করে থাকে। ড্রোনগুলো ঘুরে ঘুরে লক্ষ্য খুঁজে বের করে এবং অপারেটরের নির্দেশ পেলে লক্ষ্যবস্তুর ওপর সরাসরি আঘাত হানে। আঘাত হানার সময় ড্রোনগুলো নিজেকেও ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া গতকাল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বিবিসিকে জানান, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) গুলিবিনিময়ের সময় তাদের বাহিনী কয়েক ডজন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে। তাঁর ধারণা, কয়েক দিনের লড়াইয়ে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। তিনি অবশ্য লড়াইয়ে পাকিস্তানের সেনা নিহতের কথাও স্বীকার করেন। তবে এ সংখ্যা কত তা জানেন না বলে উল্লেখ করেন। রয়টার্সের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। কারণ উভয় পক্ষই তাদের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ সমরাস্ত্রগুলো সক্রিয় করেছে। এগুলোর ব্যবহার শুরু হলে যুদ্ধপরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তবে এরই মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাইদ শেখ সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ (এনএসসি) পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। তবে তিনি এ যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি। তিনি অবশ্য জোর দিয়ে বলেন, উত্তেজনা প্রশমনে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও কর্মকা বন্ধ করা উচিত। সাইদ শেখ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকেই সংলাপের পথে ফিরিয়ে আনতে চাপ দিচ্ছে। ওয়াশিংটন সরাসরি সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More