চুয়াডাঙ্গার ডিহিকৃষ্ণপুরে ২৫ বছরে আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু আর্সেনিকের ক্ষত নিয়ে অনেকেই কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ জীবন

নজরুল ইসলাম: পানির অপর নাম জীবন। আবার এই পানিই কোন কারণে বিষাক্ত হলে জীবনও বিপন্ন হয়ে যায়। তাই পানি দূষণ অগ্রসরমান সভ্যতার আর এক অভিশাপ। মানবসৃষ্ট দূষনের কারণে ভুপৃষ্টের উপরি ভাগের পানি দূষণের কারণ। দূষিত পানি জীবনের জন্য মারাতœক হুমকি। কিন্তু বিশুদ্ধ পানির অপরনাম নাম জীবন। কিন্তু সেই পানিতে বিষক্রিয়া হলে তা স্বাথ্যের জন্য মারাতœক হুমকি হয়ে দেখা দেয়। তেমনি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলাপাড়ার প্রায় ৬০ ঘর লোক আজ শঙ্কিত। মহল্লাটি আজ আর্সেনিক বিষের কবলে। কারণ এখানার ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপক আর্সেনিক দূষণ ঘটেছে এবং তা স্থানীয়দের জন্যে মারাতœক হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। ২০০১ সালের দিকে মানুষের শরিরে আর্সেনিকের নমুনা দেখা দেয়। এরমধ্যে ১২ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে। আবার অনেকেই আক্রান্ত হয়ে দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। এর নেই কোনো স্থায়ী সমাধান। সুপেয় পানির যে ব্যবস্থা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। আর এক আধটি আর্সেনিক মুক্ত পানির পাম্প অতিব জরুরী বলে গ্রামবাসির দাবি।
মাত্র ত্রিশ বছর আগেই অগভীর নলকূপ ছিল গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য এক আর্শীবাদ। আজ সেই অনেক নলকূপের পানিতেই ভয়াবহ বিষ আর্সেনিক। জেনে-না জেনে অনেকে সেই বিষাক্ত পানি পান করে ধীরে ধীরে বিষাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আর্সেনিক বিষাক্রান্ত রোগীর জন্য কোনো স্থায়ী সমাধানের ওষুধ নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের গাবতলা পাড়ায় প্রায় ৬০ ঘর লোকের বসবাস। লোকসংখ্যা প্রায় ৪শ জন। এদের মধ্যে অর্থশত মানুষ নলকুপের আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে আব্দুস সাত্তার, হাফিজুল, হায়দার, ডাবলু, বাবলু, লাবলু, সাহার আলী, নছিরন বেগম, আজিজুল, আমজেদ, আমানত ও জামাল হোসেন আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যু বরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়ে দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন বাহার ম-ল, বাবুর আলী, কদর আলী, আয়াত আলী, রিপন আলী স্বপন আলী, মখলেছুর রহমান, আশরাফুন নেছা, জিয়ারুলসহ অনেকেই।
আক্রান্তদের সাথে কথা বলে জানাযায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আর্সেনিকের ক্ষতচিহ্ন বিদ্যমান। অসহনিয় যন্ত্রনায় দিন কাটছে তাদের। আক্রান্তদের দাবি অন্তঃত্ব আর একটি আর্সেনিক মুক্ত পাম্প যেন তারা পায়। দুর থেকে অন্যের বাড়িতে পানি আনতে গেলে মাঝে মধ্যে কথা শূনতে হয়। আমাদের মহল্লায় একটি পাম্প অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন তিন থেকে চার বার অন্যের বাড়িতে পানি আসতে যেতে হয়। গ্রামের শিক্ষিত যুবক সবুজ জানালেন তাদের গ্রামে ১৯৯৯ সালে প্রথম পানিতে আর্সেনিক সনাক্ত হয়। ২০০১ সালের দিকে মানুষের শরিরে আর্সেনিকের নমুনা দেখা দেয়। তবে স্বাথ্য অধিদপ্তর থেকে আজ অবদি কোন খোজ খবর নেয়া হয়নি। এতো মানুষের জন্য আমাদের এলাকায় তিনটি আর্সেনিক মুক্ত পাম্প বসেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একটি পাম্প থেকে ১৫ ঘর লোক পানি ব্যবহার করতে পারে। অনেক সময় পাম্প চালিয়ে পনি ট্যাংকিতে তুলে রাখতে মনে থাকে না। ৩ হাজার লিটারের ট্যাংকি বসানো হয়েছে। প্রতিদিন তিনবার পানি তুলতে হয় ১৫ ঘর লোকের জন্য। আপাতত আর একটি পাম্প গ্রামের উত্তর পাড়ায় বসালে কিছু মানুষ উপকৃত হতো।
সূত্রে জানাগেছে, আর্সেনিক আক্রান্তদের যে সমস্থ রক্ষণ দেখা দেয় তার মধ্যে আছে শরীর বা হাতের তালুতে বাদামী ছাপ পড়তে পারে। সাধারণত বুকে, পিঠে কিংবা বাহুতে ¯পটেড পিগমেনটেশন দেখা যেতে পারে। যা পরবর্তীতে ত্বকের ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। অনেক রোগীর লিউকোমেলানোসিস, সাদা এবং কালো দাগ পাশাপাশি থাকে। আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি, ঠোঁট ইত্যাদিতে মিউকাস মেমব্রেন মেলানোসিসও হতে পারে। কারও কারও হাত-পায়ের চামড়া পুরু হয়ে যায়, আঙুল বেঁকে যায় এবং অসাঢ় হয়ে যায়। এছাড়া পায়ের আঙুলের মাথায় পঁচন ধরতে পারে। খাদ্য হজমে বিঘœ ঘটে এবং এর ফলে পেটে ব্যাথা, অরুচি, বমি বমিভাব থেকে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। মানুষের রক্তে শ্বেত ও লোহিত কণিকার উৎপাদন কমে যেতে পারে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা তৈরি হতে পারে। রক্ত নালিকা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। হাতে ও পায়ে গরম সুচ ফুটানোর মতো অনুভূতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মানব ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে। গ্রামবাসির দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন তদন্ত পূর্বক আপাতত আর একটি ডিপটিউবয়েলের ব্যবস্থা করে দেয়।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন বলেন, সর্বপ্রথম আক্রান্ত এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তদের সু-চিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি খোঁজ খোবর নিয়ে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অপর দিকে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More