মেহেরপুরে কালবৈশাখীর আধা ঘণ্টার তা-বে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি দোকানঘরের চাল ও গাছপালা ভেঙে পড়ে আহত ১০

মেহেরপুর অফিস: মাত্র আধা ঘণ্টার কালবৈশাখীর তা-বে মেহেরপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক ও বাগানমালিকেরা। গত পরশু শনিবার সন্ধ্যার ঝড়ে আম, লিচু, কলা, ধান ও পেঁপেক্ষেতের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় দোকানঘরের চাল ও গাছপালা ভেঙে পড়ে ১০জন আহত হয়েছেন। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছ, উড়ে গেছে ঘরের টিন। জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল রাতভর। পৌর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার দিকে আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়ের তা-ব। ৩০ মিনিটজুড়ে চলে ঝড়। এ সময় বজ্রাঘাত ও বৃষ্টিপাত হয়। ঝড়ে পৌর এলাকার গাছপালা, টিনের বসতঘর, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আম ও লিচুর কয়েকটি বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টিন ও মাটির বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। অনেকের টিনের চাল উড়ে যায়। শহরের বিভিন্ন সড়কে গাছ উপড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো শহর। চাঁদবিল গ্রামের কৃষক সাজিবুল ইসলামের দুই বিঘা কলাখেত মাটিতে শুয়ে পড়েছে ঝড়ের আঘাতে। তিনি বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে কলা চাষে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। বাজারমূল্য অনুযায়ী তিন লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারতাম। এখন একটি টাকাও ঘরে তুলতে পারব না। সব পুঁজি শেষ। কীভাবে পরবর্তী আবাদ করব, তা বুঝতে পারছি না।’ একই গ্রামের কৃষক রাশিদুল ইসলামের দুই বিঘা জমির ধান ও এক বিঘার পেঁপেক্ষেতও ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিনি জানান, ধান পেকে গিয়েছিল, দু-এক দিনের মধ্যেই গোলায় তুলতাম। কিন্তু ঝড়ে ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে, এখন কাটলে চিটা হয়ে যাবে। পেঁপের গাছগুলোও মাঝখান থেকে ভেঙে গেছে। লোকসান ছাড়া কিছুই থাকবে না। সদর উপজেলার কোলা গ্রামের বাগানমালিক শুভ বলেন, ‘চলতি মরসুমে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার আম-লিচুর বাগান কিনেছি। ১৫ মে থেকে গুটি ও বোম্বাই জাতের আম সংগ্রহ শুরু করেছি। ২২ মে থেকে হিমসাগর তোলা শুরু হতো। কিন্তু ঝড়ে গাছের ৪০ থেকে ৫০ ভাগ আম পড়ে গেছে, অনেক গাছও ভেঙে পড়েছে। এখন ফল বিক্রি করে লগ্নি ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় দেখছি না।’ আমঝুপি গ্রামের আমবাগান মালিক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘খরায় আগেই আম পাকতে শুরু করেছে। হিমসাগর আম গাছে থাকলেও প্রশাসনের বাধ্যবাধকতায় তুলতে পারিনি। শনিবারের ঝড়ে মোটা ও পাকা আমগুলো একেবারে পড়ে গেছে। এখন গাছের নিচে কাদার ভেতর পড়ে আছে শুধু লোকসান।’ ঝড়ের কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে সড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। উড়ে গেছে ঘরের টিন। রাতভর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল পুরো জেলা। আজ বিকেল পর্যন্ত শহরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও গ্রামের অধিকাংশ এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি। ফলে জরুরি অনেক কাজেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঝড়ের সময় মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের একটি দোকানে কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়। ঝড়ে দোকানটি ভেঙে পড়লে সেখানে থাকা ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠে কলা, পেঁপে, ধান ও বাগানের আম-লিচুর ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জেলা অফিসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাঠানোর নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আমরা মাঠে কাজ করছি।’ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুল আলম।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More