আলমডাঙ্গায় পুলিশের তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকির মুখে নিভে গেলো সেই আগুন

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহরের থানা পাড়ায় হঠাৎ করেই যেন রহস্যের পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বোধ্য ঘটনা ঘটছে হারদী মীর শামসুদ্দীন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আকুল মাস্টারের বাড়ি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে ঘটছে একের পর এক রহস্যজনক আগুন লাগার ঘটনা। বৈদ্যুতিক তার, পানির ট্যাংক, আসবাবপত্র, এমনকি জ্বীন তাড়াতে যাওয়া হুজুরদের পাগড়িতেও লাগছে আগুন! এসব দেখে এলাকার মানুষ কেউ বলছেন জ্বিনের কারসাজি, কেউ বলছেন নিছক নাটক। ঘটনার সূত্রপাত হয় আকুল মাস্টারের ঘরের বৈদ্যুতিক লাইনে অজানা কারণে বারবার আগুন লাগার মধ্য দিয়ে। এরপর একইভাবে পুড়তে থাকে পানির ট্যাংক, বিছানার চাদর, রান্নাঘরের বাসনপত্র, এমনকি ফ্রিজের ঢাকনাও। স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল মিয়া বলেন, “আগুন নিভাই, আবার লাগে। কেউ তো আগুন দেয় না, নিজে নিজেই জ্বলে যায়!” ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, “এটা সাধারণ কোনো ঘটনা না। আমরা বিশ্বাস করি এটা জ্বিনের কাজ। এলাকার অনেক হুজুরকে দিয়ে চেষ্টা করেছি এই উৎপাত থেকে বাঁচতে। তারা পারেনি। তাই ঢাকার হুজুর ডেকে এনেছি ঝাড়ফুঁকের জন্য।” তিনি দাবি করেন, “হুজুররা কয়েক দিন বাড়িতে অবস্থান করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মাঝে একজনের পাগড়ি ও পাঞ্জাবিতে আগুন ধরে গেল। ওটা দেখার পর আমরা নিশ্চিত, এই ঘটনা জ্বীনে ঘটাচ্ছে।” তবে শিক্ষিত সমাজের দাবি—‘ নাটকের আগুন’। ঘটনার রহস্যময়তায় যখন সাধারণ মানুষ অবাক ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তখন শিক্ষিত মহল তুলছেন ভিন্ন প্রশ্ন। এলাকার এক কলেজ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আখতারুজ্জামান আকুল মাস্টার এসএসসি পরীক্ষার খাতা দেখছেন। শোনা যাচ্ছে, কয়েকটি খাতা হারিয়ে গেছে। হয়তো সেই দায় এড়াতে পুরো বিষয়টি ভৌতিক রঙে রাঙানো হয়েছে।” একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, “ঘটনার সময় ও আগুন লাগার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, এগুলো পরিকল্পিত। এটি হতে পারে সামাজিক বা পেশাগত সংকট আড়াল করার প্রয়াস।” বিজ্ঞানের চোখে অলৌকিকতা: বিজ্ঞানীদের মতে, ‘নিজে নিজে জ্বলে ওঠা’ ঢ়যবহড়সবহড়হ (ঝঢ়ড়হঃধহবড়ঁং ঈড়সনঁংঃরড়হ) খুবই বিরল এবং একে ঘিরে যত গল্প প্রচলিত তার অনেকগুলোই বাস্তব অনুসন্ধানে মিথ্যা প্রমাণিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় সাধারণত দাহ্য রাসায়নিক, যেমন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, ফসফরাস, বা সহজে প্রজ্বলনযোগ্য তরল ব্যবহার করা হয়। পানির ট্যাংকে আগুন লাগার ঘটনা বিশেষভাবে অস্বাভাবিক। এটা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আগুন ধরাচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “জ্বিন বা অলৌকিক শক্তির প্রমাণ বিজ্ঞানে নেই। সাধারণত এ ধরনের কা- ঘটে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভবে, কারও ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায়।” আগুনে পুড়ছে সত্য নাকি নাটক: এলাকার মানুষের আগ্রহ এখন দ্বিধাবিভক্ত। একদল মানুষ বিশ্বাস করেন, জ্বিন-পরীর অস্তিত্বেই লুকিয়ে রয়েছে আগুন কান্ডের উত্তর। অন্যদিকে, শিক্ষিত সমাজ বলছেন, এটা একটা সামাজিক নাটক, যার উদ্দেশ্য সত্য আড়াল করা। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত এই আগুন কেবল ঘরের জিনিসপত্র নয়, পুড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বাস, শিক্ষা ও সত্যের শিকড়ও। এখন, লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে কুসংস্কারের এ আগুন নিভবে কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ সমাধান দেখছেন পুলিশের তদন্তে। তবে রহস্যময় আগুনের গন্ধে যে এখন চারদিক ধোঁয়াচ্ছন্ন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুলিশ বলছে ‘সাজানো নাটক’, সন্দেহে পরিবার: আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বিষয়টি একটি সাজানো নাটক। এখানে জ্বিন-পরীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বরং রাসায়নিক বিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সন্দেহ করছি, এই ঘটনার সঙ্গে আখতারুজ্জামান আকুল মাস্টার নিজে অথবা তার অনার্স পড়ুয়া ছেলে জড়িত থাকতে পারেন। তদন্তের স্বার্থে আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। গত বৃহস্পতিবার রাতে আকুল মাস্টারকে রিং করে জানানো হয় যে, পুলিশ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ছেলেসহ তিনি যেন থানায় আসেন। একথা শুনে ছেলে গ্রামের বাড়ি জানিয়ে আকুল মাস্টার সকালে ছেলেসহ থানায় উপস্থিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরদিন সকালে আর উপস্থিত হননি। পুলিশ যোগাযোগ করলে আগুন আর ধরছে না বলে জানানো হয়েছে।”

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More