কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নাকোবাড়িয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে ইউনুছ আলী (৬০) নামে আরও একজন মারা গেছেন। গতকাল বুধবার ভোরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ইউনুছ আলী উপজেলার নাকোবাড়িয়া গ্রামের মৃত হবিবার রহমানের ছেলে। নিহতের ভাতিজা অ্যাড. জিল্লুর রহমান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে এ সংঘর্ষের পর থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩৫-৪০টি বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গত রোববার সকালে হওয়া সংঘর্ষের দিনই ইউনুছ আলীর আরেক ভাই মহব্বত আলী নিহত হন। গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সংঘর্ষে মহব্বত আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন তার ছেলে এনামুল হক। এ মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জামাল ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে অপর পক্ষ আরিফ হোসেনের দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিলো। এর জেরে রোববার সকালে ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া গ্রামে হামলা চালান নজরুল ইসলাম মোল্লার সমর্থকরা। পরে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে অন্তত ৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে মহব্বত হোসেন নামের একজনের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয়। রোববার দুপুরে ফরিদপুর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েকদিন ধরে দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটার আশঙ্কার কথা পুলিশকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। সংঘর্ষের কিছু সময় আগে পুলিশকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তখনও পুলিশ ইউনিয়নে অবস্থান করছিলো।
জামাল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপির একটি পক্ষকে ম্যানেজ করে এলাকায় সামাজিক দল প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কোলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর প্রায়ই হামলা চালাতেন। এরই জেরে রোববার সকালে হামলা চালাতে আসে নজরুল মোল্লার সমর্থকরা। এ সময় সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
ছোট তালিয়ান গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরের দিকে নজরুল ইসলাম মোল্লার সমর্থক মহব্বত আলীর নিহতের খবর এলাকায় পৌঁছালে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩৫-৪০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এসময় গরু, ধান ও ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে গিয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। পানি খাওয়ার একটি গ্লাসও বাড়িতে অবশিষ্ট নেই। নাটোপাড়া এলাকার জলি খাতুন নামের এক নারী বলেন, সোমবার দুপুরের দিকে হঠাৎ ২০-৩০ জন এসে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে লুটপাট করে। বাড়ির সবকিছু ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ইউনুছ আলী মারা গেছেন। এ নিয়ে দু’জন মারা গেলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। তবে সংঘর্ষের আশঙ্কার কথা আমাকে কেউ আগে জানায়নি বলে জানান তিনি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.