চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ডেঙ্গু ও করোনায় সতর্ক হওয়ার আহ্বান সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন ও কোরবানি সম্পন্ন হওয়ায় জেলাবাসীকে ধন্যবাদ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু মজুদ থাকায় এবার কোরবানিতে কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। খুব সুন্দরভাবে এ জেলার মানুষ ঈদুল আযহা উদযাপন করেছেন এবং কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই কোরবানি সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য জেলাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় গরু উৎপাদন বেশি হয়। এসব জেলার খামারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা গরু-ছাগল পালন করেন তারা যতœ সহকারে এগুলো করে থাকেন। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি আরও জানান, সরকার এবার বিনামূল্যে জেলায় ৮০ মে. টন লবণ চামড়া সংরক্ষণের জন্য দিয়েছে। জেলার প্রায় ১শ’ অধিক মাদরাসা, লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার প্রধানদের সাথে প্রথমে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে চামড়া সংরক্ষণের জন্য। যোগাযোগের এক পর্যায়ে প্রায় ৫০টির অধিক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণে রাজি হওয়ায় তাদের সাথে আমরা মিটিং করেছি। মিটিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে চামড়া সংরক্ষণ করবে এসব বিষয়ে বিষদ আলোচনা করে ১৯টি প্রতিষ্ঠান রাজি হয়। তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী গরুপ্রতি ৮ কেজি ও ছাগল প্রতি ৪ কেজি করে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ১৯ প্রতিষ্ঠানে ৩৬.৩ মে. টন লবণ দেয়া হয়েছে। সে অনুপাতে ওই ১৯ প্রতিষ্ঠানে গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছে ৯১৪টি ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেছে ৫৭০টি। এতে তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী দেয়া কিছু লবণ অব্যবহৃত রয়েছে। অনেকে কাক্সিক্ষত চাহিদা অনুযায়ী চামড়া না পাওয়ায় এ লবণ রয়ে গেছে। এসব লবণের ব্যাপারে তাদেরকে জানানো হয়েছে চামড়া বিক্রির আগে যদি আপনারা মনে করেন আবারও লবণ দেয়া প্রয়োজন তাহলে এগুলো পুনরায় ব্যবহার করতে পারবেন। আর চামড়ার দাম অন্যবারের তুলনায় আশা করি তারা বেশি পাবে।
সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ জানান, জেলায় ৩ বছর করোনায় কোনো রোগী আক্রান্ত না হওয়ায় ল্যাব বন্ধ হয়ে আছে ও করোনা পরীক্ষা কীটও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া তিনি বর্তমানে ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, সকলকে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে বিশেষ করে যাদের ঠা-ার সমস্যা বেশি আছে তাদের অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু মশা দিনের বেলায় কামড়ায় বেশি। এজন্য দিনে-রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই সকলকে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
সভায় জানানো হয়, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৮৪ হাজার গরু-ছাগল কোরবানি দেয়া হয়েছে। পশু মজুদ ছিলো এক লাখ ২৪ হাজার। এছাড়া জেলায় যেসব খামারিরা বড় গরু পালন করেছেন তাদের প্রায় অর্ধেক বিক্রি না হওয়ায় ঢাকা থেকে ফেরত এনেছেন। ব্যক্তিগতভাবে যারা ২-৪টা গরু পালন করেছেন তাদের অনেকের গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফেরত আসা কিছু কিছু গরুর মধ্যে ক্ষুরা রোগ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ যাতায়াতের কারণেও অনেক সময় গরুর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চুয়াডাঙ্গার বাইরে যেসব খামারিরা গরু বিক্রি করতে নিয়ে গেছেন তাদের মোবাইলের মাধ্যমে অনেক পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে ডেঙ্গু ও মহামারি করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সেখানে মশার স্প্রে ছেটানোর জন্য পৌর প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এ ব্যাপারে পৌর প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জানান, রোববার থেকে পৌর এলাকার সমস্ত ড্রেন অলরেডি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ১৫ দিনের এ উদ্যোগ থাকলেও পৌরসভা আরও বেশি সময় নিয়ে সমস্ত ড্রেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে মশার স্প্রে ছেটানোর উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। খুব শিগগিরই এ কাজের ফলাফল পেয়ে যাবো। এছাড়া যারা ড্রেনের মধ্যে বিভিন্ন প্লাস্টিকের অব্যবহৃত পণ্য, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন জিনিস ফেলা বন্ধ করার জন্য পৌরবাসীকে অনুরোধ জানান পৌর প্রশাসক। মাছের আড়তে অনেক প্রতিষ্ঠানের ড্রেনে পানির সাথে অন্যান্য ময়লা আর্বজনা ফেলে থাকেন তাদেরকে সেখানে পানি যাওয়ার মুখে নেট ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার শাখা) শারমিন আক্তার, সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. সাইফুল্লাহ, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-আমীন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি রাজীব হাসান কচি, সেক্রেটারি বিপুল আশরাফ সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।