আলমডাঙ্গার শহীদ মিনার মাঠের ভেতর অবৈধভাবে তৈরি করা টয়লেটের ১২টি সেফটি ট্যাংক অপসারণের দাবি

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার শহীদ মিনার মাঠের ভেতর অবৈধভাবে তৈরি করা টয়লেটের ১২টি সেফটি ট্যাংক অপসারণের দাবি তুলেছেন আলমডাঙ্গাবাসী। ব্রাইট মডেল স্কুল মালিক জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে শহীদ মিনার মাঠের জমি অবৈধভাবে দখল করে তাতে টয়লেটের ১২টি সেফটি ট্যাংক নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোপূর্বে জাকারিয়া হিরো কর্তৃক দখলকৃত জমির রাস্তা মাপজোকের পর তা শহীদ মিনার মাঠের জমি বলে প্রতিয়মান হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কোর্টের কমিশনের মাপজোকের পর তা আবারও প্রতীয়মান হল। রাস্তাটি ব্রাইট মডেল স্কুলের পরিচালক ভূমিদস্যু জাকারিয়া হিরো নিজের জমি দাবি করে তা দখল করেন। পরবর্তীতে উপরোক্ত দাবি তুলে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ আদালত অ্যাডভোকেট কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিবাদমান জমি মাপজোকের আদেশ প্রদান করেন। আদেশের প্রেক্ষিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অ্যাডভোকেট কমিশন চুয়াডাঙ্গা জর্জ কোর্ট অ্যাডভোকেট এখলাছুর রহমান কাজল জমি মাপজোকের পর এ তথ্য জানান।
জানা যায়, আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ (আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি) কিছুটা দখল করে ভোগ করে আসছিলেন জাকারিয়া হিরো। অভিযোগ উঠে হিরো তার বহুতল ভবনের টয়লেটের টাংকি তৈরি করেছেন শহীদ মিনার স্থাপনার ভেতরে (শহীদ মিনার স্থাপনার তলদেশে মাটির নীচে)। এমন অভিযোগের কারণে শহরের আমজনতা ফুঁসছিল দীর্ঘ বছর। জাকারিয়া হিরো প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করেই এতকাল তিনি এসব অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়রকে প্রাইট মডেল স্কুলের সভাপতিসহ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সভাপতি করে নির্বিঘেœ ভূমি দস্যুতা অব্যাহত রেখেছিলেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবারও মাঠটির চৌদিকে সীমানা পাঁচিল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সীমানা পাঁচিল নির্মাণ করতে গিয়ে ভূমিদস্যু জাকারিয়া হিরোর বাহিনী বাধা প্রদান করে। সে সময় সেনাবাহিনী ডেকে নিয়ে এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে সেনাবাহিনী এসে বিস্তারিত জানার পর আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের সীমানা অনুযায়ী পাঁচিল নির্মাণ করতে বলেন। এরই মাঝে জাকারিয়া হিরো কর্তৃক আত্মসাৎকৃত আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগারের জমি উদ্ধারে কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি জমি উদ্ধার করার জন্য কয়েক দফা আন্দোলন করেন। বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করেন। শহীদ মিনারের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা রাস্তাটি তার নিজের জমিতে দাবি করে ভূমিদস্যু জাকারিয়া হিরো আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলার আসামি করা হয় আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান ও ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে। ওই মামলায় গত ৫ জানুয়ারি শুনানি পর অ্যাডভোকেট কমিশন নিয়োগ করা হয়। অ্যাডভোকেট কমিশন গতকাল জমি মাপজোক করেন। মাপজোকের পর অ্যাডভোকেট কমিশন এখলাছুর রহমান জানান, ব্রাইট মডেল স্কুলের যাওয়া আসার রাস্তাটি শহীদ মিনারের জমি। মাপজোক করে তিনি সীমানা নির্ধারণ করে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান, ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল করিম চনচল, আব্দুর রশিদ মঞ্জু, সাহিত্যিক পিন্টু রহমান, রেজাউল করিম, মোল্লা ফারুক এলাহি ইসলাম, আলমডাঙ্গা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মাজেদুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদ হাসান শুভ, সদস্য সচিব আল ইমরান রাসেল, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহমুদুল হক তন্ময়, রাসেল, ফামিদুর রহমান মুন, সুলতানুল আরেফিন তাইফু, হাসিব, বাপ্পী, সাদ্দাম খান, ডন, সবুজ সহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকবৃন্দ।
ওই মাপজোকের পর থেকেই দাবি উঠেছে শহীদ মিনার স্থাপনার মাটির নীচে অবৈধভাবে নির্মাণ করা ভূমিদস্যু জাকারিয়া হিরোর টয়লেটের সেফটি ট্যাংকগুলি অপসারণের। জাকারিয়া হিরো নিজের উদ্যোগে সেফটি ট্যাংকগুলি অপসারণ না করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে আলমডাঙ্গাবাসী।
আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটির সভাপতি ইকবাল হোসেন মিয়া বলেন, ‘মাপজোকের পরও বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু ভূমিদস্যু হিরো আজোবধি শহীদ মিনারের জমিতে অবৈধভাবে নির্মাণ করা সেফটি ট্যাংকগুলি অপসারণ করেনি। আমরা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় শৌর্যবীর্য, বীরত্ব ও মর্যাদার প্রতীক। সেখানে অবৈধভাবে টয়লেটের সেফটি ট্যাংক নির্মাণ করা গর্হিত কাজ। জাকারিয়া হিরো এই অপকর্ম করে জাতির সাথে বেয়াদবি করেছেন। প্রশাসনের উচিত ছিল দ্রুত সেগুলি অপসারের ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে জনক্ষোভ উচ্চকিত হচ্ছে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More