করোনা ঠেকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার : আরও একজনের মৃত্যু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একগুচ্ছ নির্দেশনা : শনাক্তে পজিটিভ রোগীদের একমাস পর্যবেক্ষণে

স্টাফ রিপোর্টার: আবারও চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস। বাড়ছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ। প্রতিরোধে ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে জানতে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়েছে একগুচ্ছ জরুরি নির্দেশনা। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশ ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি জোরদার করতে বলা হয়েছে। জনসাধারণের উদ্দেশে বেশ কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল থেকে পজিটিভ রোগীদের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী এক মাস ফলোআপ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো সম্পর্কে জানা যাবে। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তবে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আগাম সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা বয়স্ক ও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন তাদের বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক ব্যক্তি নমুনা পরীক্ষার জন্য আসছেন। এই সংখ্যা শতাধিকের বেশি হবে না। এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তির নমুনা দিয়ে শতাংশের হিসাব করলে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে না। স্বল্প সংখ্যক নমুনা হিসাবে আক্রান্ত রোগীর হার শতকরা ৮ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে থাকছে। শুধু এক দিন ১৩ শতাংশের বেশি আক্রান্ত ছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী সত্যিকার অর্থে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনিসহ আরও যে কয়জন মারা গেছেন, তাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি।
রাজধানীসহ সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেঞ্জ রিঅ্যাকশনসহ (আরটিপিসিআর) বিভিন্ন পদ্ধতিতে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে সরকার। গতকাল থেকে দেশের ১৭টি স্থানের ল্যাবরেটরিতে আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিগুলোতে পর্যাপ্ত টেস্ট কিট সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য ভিটিএম (ভাইরাল ট্রান্সমিশন মিডিয়া) পাঠানো হয়েছে। তারা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে নিকটস্থ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠাবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান এ তথ্য জানান।
ভুক্তভোগীদের দাবি, তারা বিভিন্ন হাসপাতালে (যেখানে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি রয়েছে) যোগাযোগ করলেও নমুনা পরীক্ষার জন্য টেস্ট কিট নেই বলে জানানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটির পর গতকাল থেকে সরকারি অফিস আদালত খুলেছে। গত দু-তিন দিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষার কিট পাঠানো হয়েছে। আজ থেকে দেশের ১৭টি স্থানে আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরিতে সরাসরি ও ভিটিএম পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে এনে পরীক্ষা করা হবে। আগামী এক মাস পজিটিভ রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একগুচ্ছ জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা কাজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে।
গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- বারবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত ২০ সেকেন্ড), জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু অথবা কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখা। করোনায় একজনের মৃত্যু : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় আরও ২৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চারজন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এক কোটি ৫৭ লাখ ২৭ হাজার ২২৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তি একজন পুরুষ। তার বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকা বিভাগের সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More