গাংনীতে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সন্ত্রাসীরা একের পর এক বোমা ও কাফনের কাপড় রেখে হুমকি : জনমনে আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন পর মেহেরপুরের গাংনী এলাকায় আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। এরা চাকরীজীবী ও ব্যবসায়িদের বাড়িতে বোমা কাফনের কাপড় ও জিবন নাশের হুমকী সম্বলিত চিরকুট রেখে হুমকী দিচ্ছে। চিরকুটে তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য দিচ্ছে মোবাইল ফোন নম্বর। কোথাও কোথাও গোপনে ও প্রকাশ্যে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। পুলিশ আজও এ ঘটনায় জড়িতদেরকে সনাক্ত ও আটক করতে পারেনি। তবে পুলিশ বলছে, বোমাবাজ ও সন্ত্রাসীদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগনের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, একসময়কার চরমপন্থী অধ্যাষুত এলাকা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি ছিলো মেহেরপুরের গাংনী। সেময় চাঁদাবাজি খুন রাহাজানি ছিল নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। শ্রেণি শত্রু খতম, চাঁদাবাজি ও এলাকা দখলের নিমিত্তে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। পরে প্রশাসনিক তৎপরতায় সেটি বন্ধ হয়। অনেকেই স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসতে আত্ম সমর্পন করে। স্বাভাবিক হয় জনজিবন। সম্প্রতি আবারো শুরু হয়েছে সেই আগের চিত্র। একের পর এক বোমা, কাফনের কাপড়, আগরবাতি, সাবান ও জিবন নাশের হুমকী সম্বলিত চিরকুট রেখে যাচ্ছে ধর্ণাঢ্য ব্যাক্তি ও ব্যবসায়ির বাড়িতে। চাওয়া হচ্ছে চাঁদা। অনেকেই গোপনে তা পরিশোধ করছেন। সন্ধ্যার পরপরই বিভিন্ন স্থানে বিকট শব্দে বোমা বিষ্ফোরনের শব্দে আতংকিত হয়ে পড়ছেন এলাকাবাসি। প্রাপ্ত তথ্য মতে গেল ৪ মাসে ১৪টি বোমা উদ্ধার ও দুটি বোমার বিষ্ফোরণ ঘটনা ঘটেছে। বোমা রেখে চাঁদা দাবী ও জিবন নাশের হুমকী দেয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করলেও আজও এ ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে সনাক্ত করতে পারেনি। এতে জনগনের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা অসন্তোষ। অনেকেই পুলিশের ভূমিকাকে দ্বায়ি করেছেন। এলাকায় টহল না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
তথ্যমতে, ১৭ জুন গাংনীর চরগোয়াল গ্রাম ঘাটপাড়ার আলতাব হোসেনের মুদি দোকানের সামনের রাস্তা থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় একটি বোমা সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে একটি হাতে লেখা চিরকুট। তাতে প্রাণ নাশের হুমকী দেয়া হয়েছে। ২ জুন রাতে বামুন্দী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইটভাটা ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের বাড়ির গেটের সামনে একটি বোমা ও চিরকুট রেখে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। ১২ মে চোখতোলা মাঠে অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তল, ৫টি ককটেল বোমা ও ৪০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ডাকাতির উদ্দেশ্যে ককটেল বোমা প্রস্তুত করছিলো একদল দুষ্কৃতীকারী।
সংবাদ পেয়ে মেজর ফারহান এবং লেফটেন্যান্ট মিনহাজের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় দুষ্কৃতিকারীরা ২টি মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। ৩ মে রাতে গাংনীর পাকুড়িয়া-খড়মপুর সড়কে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন সহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করা হয়েছে। স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। ২৭ এপ্রিল গাংনী উপজেলার রাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ থেকে ৩টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই দিন সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া খাতুন ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবনের ছাদে যায়। এসময় তারা লাল স্কচ টেপ দিয়ে মোড়ানো বোমা সাদৃশ্য তিনটি বস্তু দেখে পুলিশের খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তা উদ্ধার করে থানায় নেয়। ১মার্চ গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম সংলগ্ন ব্রিজের ওপর ৩টি বোমা সদৃশ্য বস্তু দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। দুর্বৃত্তরা ব্রিজের ওপর এই বস্তুগুলো রেখে সড়কের ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। স্থানীয়দের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল জানান, বোমা রেখে হুমকীর ঘটনা এবং বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে এটা সঠিক। তবে পুলিশ এসব ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে। দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More