রহমান মুকুল: বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার কৃষিতে রোবট কিংবা ড্রোন ব্যবহৃত না হলেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দৃশ্যমান। এই জেলার কৃষকরা আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, বীজবপন, সেচ, ফসল কর্তন, মাড়াই ও সংরক্ষণের কাজ করছেন। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, রিপার, কম্বাইন হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও বেড প্ল্যান্টারের মতো আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ, কমেছে শ্রম, সময় ও ব্যয়। জেলায় জমি তৈরির ৯৫ শতাংশ কাজ এখন ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলারে সম্পন্ন হয়। একইভাবে সার প্রয়োগ, আগাছা দমন ও সেচকাজেও আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার এবং রিপারের মতো যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। এখন সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ জনপ্রিয় হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সর্বাধিক। এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে কৃষকরা উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারছেন। ফলে ধান কর্তনে সময় বাঁচছে, শ্রমিকের প্রয়োজন কমছে এবং ফসলের অপচয়ও হ্রাস পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, এই জেলায় কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি রিপার ও পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্র, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও বেড প্ল্যান্টার ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকরা সুনির্দিষ্ট দূরত্বে ও গভীরতায় বীজ বপন ও চারা রোপণ করতে পারছেন, যা গাছের বাড়-বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে এবং উৎপাদন বাড়ছে।
অন্যদিকে, আধুনিক চালকল ব্যবহারে কৃষক ও মিল মালিকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এঙ্গেলবার্গ হলারের তুলনায় আধুনিক অটো রাইস মিল থেকে প্রতি মণে বেশি চাল পাওয়া যাচ্ছে এবং ভাঙা চালের পরিমাণও কমছে বলে জানা গেছে। ফলে চাল উৎপাদনের অপচয় কমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হচ্ছে। আলমডাঙ্গার ডামোশ গ্রামে অবস্থিত অটো রাইস মিলটি বেশ ব্যবসাসফলও। তবে, এসব উন্নয়নের মাঝেও কিছু বাস্তব সমস্যা রয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে কিছু চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বাড়লেও এখনো কিছু বাস্তব প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। যেমন: অনেক কৃষকের প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার অভাব রয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে উন্নত যন্ত্রপাতি ক্রয় বা ভাড়া নেয়া ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। সরকারি প্রণোদনায় যে সকল কৃষক কম্বাইন হারভেস্টার কিনেছেন, তাদের অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। যে কোম্পানি হারভেস্টার সরবরাহ করেছিল, সে কোম্পানি পরবর্তীতে আর বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করেনি। তাদের ট্রেসও পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ এলাকাতেই মেরামত বা খুচরা যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা নেই। মরসুমি ভিত্তিতে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হওয়ায় সারা বছর যন্ত্র ব্যবহারের সুবিধা সীমিত। যন্ত্র পরিচালনায় দক্ষ অপারেটরের অভাব এবং বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সমস্যা কোনো কোনো এলাকায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রতিবন্ধকতা দুর করতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যন্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন। সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগে এই সমস্যা সমাধান করা গেলে চুয়াডাঙ্গার কৃষি টেকসই ও লাভজনক খাতে রূপ নেবে নিঃসন্দেহে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, “কৃষির যান্ত্রিকীকরণে সরকার ব্যাপক ভর্তুকি দিচ্ছে। আমাদের চেষ্টায় কৃষকরা দিনে দিনে আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে বাস্তবতার নিরিখে এখনো অনেক প্রান্তিক কৃষক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এদের পাশে দাঁড়াতে আমরা নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় ধান চাষে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপারের চাহিদা বেড়েছে। যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকরা সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচাতে পারছেন। তবে প্রশিক্ষণ ও সেবা কাঠামোর ঘাটতি এখনো রয়েছে, যা দূর করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.