সীমান্ত দিয়ে মাদকের প্রবেশ : আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে

দেশে মাদকের বিস্তার যেন কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার ছিলো আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। এ উপলক্ষ্যে দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। আয়োজন করা হয় সভা-সেমিনার, মানববন্ধনের। তবে মাদকের বিস্তার রোধে এসব আয়োজন কতোটা ভূমিকা রাখে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কারণ দেশে মাদকের প্রবেশ বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ নয়; কিন্তু সর্বত্র মাদকে সয়লাব। এর অন্যতম কারণ সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে নানা ধরনের মাদক। জানা যায়, ২৯টি সীমান্তবর্তী জেলার ১৬২টি রুট দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা, আইস, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, টপেন্টাডল, এলএসডি, কোকেনের মতো ভয়াবহ সব মাদকদ্রব্য। আকাশপথেও প্রবেশ করছে কিছু মাদক। মাদকাসক্তি এমন এক ব্যাধি, যা দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে, তারা হারাচ্ছে কর্মক্ষমতা, যা প্রকারান্তরে দেশের ভবিষ্যৎকে করে তুলছে অনিশ্চিত। এটাও দেশের জন্য দুর্ভাগ্য যে, ভৌগোলিকভাবে মাদক বলয় গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ট্রায়াংগেলের মাঝেই আমাদের অবস্থান। পাশের দেশগুলো থেকে এখানে মাদক ঢুকছে দেদারসে। ফলে দেশে মাদক ব্যবসার অনেক চক্র গড়ে উঠেছে। জানা যায়, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তের অনেক স্থানই রয়েছে অরক্ষিত। এছাড়া মাদকের অনুপ্রবেশ রোধের দায়িত্ব যাদের, তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এক্ষেত্রে মাদক কারবারিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশের অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামে একটি সংস্থা রয়েছে। এ সংস্থার কার্যাবলি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় প্রয়োজনমাফিক পরিচালিত হচ্ছে না। বরং সংস্থাটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও শোনা গেছে অতীতে। আমরা মনে করি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিরুদ্ধে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। যেসব সীমান্তপথে মাদকদ্রব্য প্রবেশ করছে সেগুলো যেহেতু চিহ্নিত, সেহেতু ওইসব সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং কড়াকড়ি আরোপ করা জরুরি। দেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মাদক অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে। এ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মাদকাসক্তি রোধে পরিবারগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক অশান্তি ও নানা ধরনের হতাশা থেকে অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে যেমন চালাতে হবে কঠোর অভিযান, তেমনি মাদক সেবনের পেছনের কারণগুলোও দূর করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More