গাংনীতে আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি : ৬ মাসে ২১টি বোমা উদ্ধার বোমা উদ্ধারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ পুলিশের কাজ

গাংনী প্রতিনিধি: গাংনীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। একের পর এক বোমা ফাটিয়ে ডাকাতির ঘটনা ছাড়াও বোমা রেখে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ায় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসী ডাকাত ও চাঁদাবাজরা বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করা ছাড়াও বোমা ও কাফনের কাপড় রেখে হুমকি দেয়, আর পুলিশ ওই বোমা উদ্ধারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জনসাধারনের মতে, পুলিশ এখন পরিণত হয়েছে কাগুজে বাঘে। তবে পুলিশ বলছে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী অঞ্চল একসময় চরমপন্থী অধ্যাষুত এলাকা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি ছিল। সেময় চাঁদাবাজি খুন রাহাজানি ছিল নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। শ্রেণি শত্রু খতম, চাঁদাবাজি ও এলাকা দখলের নিমিত্তে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। পরে প্রশাসনিক তৎপরতায় সেটি বন্ধ হয়। অনেকেই স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসতে আত্মসমর্পন করে। স্বাভাবিক হয় জনজিবন।
সম্প্রতি আবারও শুরু হয়েছে সেই আগের চিত্র। একের পর এক বোমা হামলা, বোমা ও কাফনের কাপড়,আগরবাতি, সাবান ও জীবন নাশের হুমকি সম্বলিত চিরকুট রেখে যাচ্ছে ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ির বাড়িতে। চাওয়া হচ্ছে চাঁদা। অনেকেই গোপনে তা পরিশোধ করছেন। সন্ধ্যার পরপরই বিভিন্ন স্থানে বিকট শব্দে বোমা বিষ্ফোরনের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন এলাকাবাসি।
প্রাপ্ত তথ্য মতে গেল ৬ মাসে ২১টি বোমা উদ্ধার ও ৩টি বোমার বিষ্ফোরণ ঘটনা ঘটেছে। বোমা রেখে চাঁদা দাবি ও জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করলেও আজো এ ঘটনায় জড়িতদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। জড়িতদেরকে সনাক্ত করতেও পারেনি পুলিশ। এতে জনগনের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা অসন্তোষ। অনেকেই পুলিশের ভূমিকাকে দ্বায়ি করেছেন। এলাকায় টহল না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
তথ্যমতে,০১ জুলাই রাতে পোড়াপাড়া- যুগিন্দা সড়কে বোমা ফাটিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদল গরু ও সবজি ব্যবসায়ীদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যবসায়িদেরকে মারপিট করে ৫০ হাজার টাকা লুট করে। ডাকাতদের হামলায় কয়েকজন আহত হয়। ২৬ জুন সকালে গাংনী উপজেলার নওদা মটমুড়া গ্রামে স্থানীয় বিএনপি অফিসের সামনে থেকে দুটি বোমা সদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। ২৫ জুন রাতে গাংনী থানার অদূরে বিল্লাল নার্সারীর কাছে গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা বোমা ফাটিয়ে ব্যবসায়িদেরকে জিম্মী করে মালামাল লুট করে। ১৭ জুন গাংনীর চরগোয়াল গ্রাম ঘাটপাড়ার আলতাব হোসেনের মুদি দোকানের সামনের রাস্তা থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় একটি বোমা সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে একটি হাতে লেখা চিরকুট।তাতে প্রাণ নাশের হুমকী দেয়া হয়েছে।
২ জুন রাতে বামুন্দী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইটভাটা ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের বাড়ির গেটের সামনে একটি বোমা ও চিরকুট রেখে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।১২ মে চোখতোলা মাঠে অভিযান চালিয়ে ১টি পিস্তল, ৫টি ককটেল বোমা ও ৪০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ডাকাতির উদ্দেশ্যে ককটেল বোমা প্রস্তুত করছিল একদল দুষ্কৃতীকারী। সংবাদ পেয়ে মেজর ফারহান এবং লেফটেন্যান্ট মিনহাজের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় দুষ্কৃতিকারীরা ২টি মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। ৩ মে রাতে গাংনীর পাকুড়িয়া-খড়মপুর সড়কে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করা হয়েছে। স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। ২৭ এপ্রিল গাংনী উপজেলার রাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ থেকে ৩টি বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই দিন সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া খাতুন ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবনের ছাদে যায়। এসময় তারা লাল স্কচ টেপ দিয়ে মোড়ানো বোমা সাদৃশ্য তিনটি বস্তু দেখে পুলিশের খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তা উদ্ধার করে থানায় নেয়। ১ মার্চ গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম সংলগ্ন ব্রিজের ওপর ৩টি বোমা সদৃশ্য বস্তু দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। দুর্বৃত্তরা ব্রিজের ওপর এই বস্তুগুলো রেখে সড়কের ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। স্থানীয়দের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ২৮ ফেব্রুয়ারী তেতুলবাড়িয়া- ধলা সড়কের ব্রিজের ওপর থেকে ৩টি বোমা উদ্ধার করে স্থানীয় ধলা ক্যাম্প পুলিশ।নাশকতামূলক কাজের জন্য বোমাগুলো রাখা হয়েছিলো বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ ঝাড়াও ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে মানিকদিয়া মাঠের মধ্যে বিকট শব্দে ৩টি বোমা বিষ্ফোরিত হয়। গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল জানান, বোমা রেখে হুমকীর ঘটনা এবং বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে এটা সঠিক।তবে পুলিশ এসব ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে। দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More