ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংস্কারের জোর চেষ্টা পিআর পদ্ধতির ভোট নিয়ে জনসাধারণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কারের জোর চেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচন প্রক্রিয়া কী হবে সেটা আলোচিত হচ্ছে। চলমান প্রক্রিয়ার পাশাপাশি পিআর বা ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পেয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতিতে ভোটের ওপর বেশ জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো এর বিরোধিতা করছে। ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার পদ্ধতি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৃথিবীর ১৭০টি দেশের মধ্যে অর্ধেকের মতো দেশে নির্বাচন হয় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। যেটিকে বলা হয় প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর। এই পদ্ধতিতে একটি দল যত ভোট পায়, সেই অনুপাতে জাতীয় সংসদে আসন লাভ করে। এতে একটি নির্বাচনের পর সংসদে সব দলের ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকে। এর কিছু ইতিবাচক দিক যেমন আছে তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন ব্যাপক চর্চা হচ্ছে তখন ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে আমরা সাধারণ কিছু মানুষের মতামত জানার চেষ্টা করেছি। সেখানে দুই ধরনের মতই পাওয়া গেছে। কেউ কেউ নতুন পদ্ধতি হিসেবে পিআরকে স্বাগত জানালেও বেশির ভাগই আগামী নির্বাচন এই পদ্ধতিতে হোক সেটা চান না। তারা বলছেন, এই পদ্ধতির ভালো কিছু দিক থাকলেও এখনই বাংলাদেশের জন্য তা উপযোগী হবে না। এই পদ্ধতি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। এছাড়া এসব বিষয়কে ইস্যু বানালে নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে খেটে খাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। কী পদ্ধতিতে ভোট হবে সেটার চেয়ে তাদের কাছে ভোট যেন নিরপেক্ষ ও অবাধ হয় সেটাই তারা চান। অনেক বছর ধরে ভোট দিতে পারেন না জানিয়ে দ্রুত সময়ে যেন ভোটের আয়োজন করা হয় সেই দাবি তোলেন তারা। ঢাকায় রিকশা চালান রংপুরের রইস মিয়া। তিনি বলেন, ‘ভোট-টোট বুঝি না, আমাদের পেটে কেউ লাথি না দিলেই হবে। আমরা খেটে-খেয়ে বাঁচতে চাই।’ মিরপুর এলাকায় কথা হয় স্টেশনারি দোকানি আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেশের যে পরিস্থিতি তাতে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া জরুরি। কারণ দীর্ঘদিন মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তাই আমাদের দেশের প্রচলিত পদ্ধতিতেই নির্বাচন হওয়া চাই।’ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী তামিম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দেশের সব কিছু যেহেতু সংস্কার হচ্ছে, তাই আগামীতে যাতে কেউ আর শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচার হতে না পারেন সেটির জন্য সব কিছু সংস্কার করতে হবে। তাই নির্বাচনসহ সবকিছু আরও উন্নত হওয়া চাই।’ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জলিল হোসেন বলেন, ‘দেশের যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সেটি পরিপূর্ণভাবে করা উচিত। নির্বাচনব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছুর সংস্কার হওয়া উচিত। তারপর দেশের নাগরিকদের জন্য যেটা ভালো হয় সেটা করা উচিত। উন্নত দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, সেটি আমাদের দেশে হলে তো ভালোই হবে। কিন্তু ভালো করতে গিয়ে খারাপ হলে আবার সমস্যা। তাই টেকসই চিন্তা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’ বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আসলে নির্বাচনের আমেজ যে কী জিনিস দেশের মানুষ সেটা ভুলেই গেছে। তাই নির্বাচনের আমেজ ফিরিয়ে আনতে যা যা করার সব করা উচিত। নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো নিরপেক্ষতা। সেটি ঠিক থাকলেই চলবে। আর নতুন কিছু নয়, বরং প্রচলিত নিয়েমেরই নির্বাচন চাই।’ মিরপুর-১২ এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কউন্সিলর প্রার্থী মালেক হোসেন বলেন, ‘হুট করে নতুন কোনো পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সেটি অনেকের অজানা থাকবে। দেশের মানুষকে কোনো বিষয়ে সঠিকভাবে জানানোর আগে তেমন নির্বাচন করা ঠিক হবে না। কারণ নতুন এই পদ্ধতির ব্যাপারে অনেকেই জানেন না। তাই প্রচলিত নিয়মেই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই বরং ভালো হবে।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.