চুয়াডাঙ্গায় অতিরিক্ত জমিতে উচ্চফলনশীল কুমড়ার চাষ ডিলারের নিকট না পাওয়া গেলেও বেশি দামে খোলাবাজারে মিলছে সার

নজরুল ইসলাম : চুয়াডাঙ্গায় বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চ ফলশীল জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ। বিশেষ করে দর্শনায় কেরুজ ১০টি কৃষি খামারের প্রায় ২ হাজার বিঘা জমিতে মিষ্ট কুমড়ার চাষ হয়েছে। এতে করে হঠাৎ করে এসব এলকায় বিভিন্ন প্রকার সারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কুমড়া চাষিরা চাহিদামত সার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। ডিলারের নিকট সার পাওয়া না গেলেও বেশিদামে খোলাবাজারে মিলছে সার। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু খুরচা ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করে অধিক মুনাফা পকেটে ভরছে। যদিও কুমড়া চাষের জন্য অতিরিক্ত সার বরাদ্ধ নেই জেলাতে। সময় মত কুমড়ার জমিতে সার দিতে না পারলে চরম আর্থীক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে চাষিরা জানিয়েছেন।

কুমড়া একটি শীত কালিন সবজি চাষ। শীতকালীন সবজি চাষ হলেও গ্রীষ্মকালীন সময় (ফেব্রুযারি-মার্চ) উচ্চ ফলনশীল জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। ৪ মাসের মাথায় মিষ্টি কুমড়ার ফল সংগ্রহ করা যায়। দর্শনা কেরুজ চিনিকলের আওতায় রয়েছে ৯টি কৃষি খামার ও ১টি বীজ উৎপাদন খামার। আখ কাটার পর এসব জমি অলস পড়ে থাকে। আর এ অলস জমি চিনিকল কর্তৃপক্ষ টে-ারের মাধ্যমে লীজ দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে থাকে। তারি ধারাবাহিকতায় চলতি বছর খামার গুলোর প্রায় ৭১০ একর জমি অর্থাৎ ২ হাজার ১৩০ বিঘা জমি কুমড়া লাগানোর শর্থে লীজ প্রদান করেছে। লিজ গ্রহীতারা এসব জমি লীজ নিয়ে হাইব্রিড জাতের উচ্চফলশীল মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছে। মিষ্ট কুমড়া চাষে ফসফেট, ডিএপি ও পটাশ সার লাগে বেশি। এলাকায় কুমড়া চাষের বিপরীতে সারের যোগান খুবই কম। কুমড়া চাষিরা সারের জন্য ডিলারসহ বিভিন্ন জয়গায় ধর্ণা দিচ্ছে। ডিলাদের নিকট সার না মিললেও খোলাবাজারে বস্তা প্রতি ৪শ থেকে ৫শ টাকা বেশি দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে বলে চাষিরা অভিযোগ করে বলেন। কুমড়া চাষি নুরনবী, হালিম, হযরত আলী, নবী, মিজানুর রহমান, সামসুল, জালাল, ছানোয়ার অভিযোগ করে বলেন, ডিলারদের নিকট চাহিদা মত ফসফেট, ডিএপি ও পটাশ  সার পাওয়া যাচ্ছে না। তবে খোলাবাজারে বস্তা প্রতি ৪শ থেকে ৫শ টাকা বেশি দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন গ্রামের সার কিটনাশ ব্যবসায়ীরা সার পাচ্ছে কোথায়। উপায়অন্ত না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে সার কিনে কুমড়ার জমিতে দিচ্ছি। কারণ উপযুক্ত সময়ে ফসলের জমিতে সার দিতে না পারলে ফলন ভালো হবে না। কুমড়া চাষি মাসুদ রানা বলেন, জেলা থেকে যখন সার বণ্টন হয় তখন প্রতিটি ইউনিয়নে সমান ভাবে ভাগ হয়। সব ইউনিয়নে তো ধান. পাট ও সবজির আবাদ সমান ভাবে হয় না। তাই আমাদের দাবি নেহালপুর, বেগমপুর ও তিতুদহ ইউনিয়ন এলাকায় কেরুজ চিনিকলের জমি বেশি। আর এ সময় কুমড়ার চাষ শুধুমাত্র আমাদের এলাকাতেই বেশি হয়ে থাকে। জেলা থেকে সার বণ্টনের সময় কৃষি অফিসার কর্তিক জরিপ করে সার বরাদ্ধ দিলে এ সংকট দেখা দিত না। কুমড়া চাষ স্বল্প সময়ের চাষ। সময় মত জমিতে সার দিতে না পারলে আর্থীক ভাবে চরম ক্ষতির সন্মুখিন হবে চাষিরা।

অপর দিকে সূত্রে জানাগেছে, চাষযোগ্য জমি ও বাড়ির আঙিনায় বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ মিষ্টি কুমড়া চাষ হয় ব্যাপকভাবে। প্রায় সারা বছর এই সবজির চাষবাদ করা যায়। বৈশাখী, বর্ষাতি ও মাঘী তিন শ্রেণিতে বিভক্ত মিষ্টি কুমড়া। কচি ফল সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শুধু সবজি হিসেবে নয় মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধি গুণ। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় মিষ্টি কুমড়ার বীজ বছরের যে কোনো সময় বোনা যায়। শীত মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে চাইলে অক্টোবর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা উত্তম। আর গ্রীষ্মকালে এই বর্ষজীবী সবজির চাষবাদ করতে চাইলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। উন্নত ফলন পেতে হলে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজ বোনা উচিত। সার ব্যবহার ও প্রয়োগ পদ্ধতি মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন পাওয়া জন্য মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে জমিতে সার প্রয়োগ করা দরকার। আমাদের দেশের পেক্ষাপটে প্রতিটি পিটে সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে পরিবেশ এবং মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সব সময় জৈব সার ব্যবহার করা উচিত । বীজ বপনের প্রায় ১০-১৫ দিন আগে প্রতিটি প্লান্টে গোবর, টিএসপি, এমপি, জিপসাম মাটির সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করে পিট তৈরি করতে হবে। বীজ অঙ্কুরিত হলে ১৫-২০ দিন পর প্রতিটি পিটে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। তবে মাদার ক্ষেত্রে প্রতি গর্তে গোবর বা কমপোস্ট ৫ কেজি, ইউরিয়া ১৩০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমপি ১৫০ গ্রাম, জিপসাম ৯০ গ্রাম ও দস্তা সার ৫ গ্রাম দিতে হবে। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার বীজ বোনার ৮-১০ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া দুইভাগে বীজ বোনার ১০ দিন পর প্রথমবার ও ৩৫ দিন পর দ্বিতীয়বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাদার চারপাশে অগভীর একটি নালা কেটে সার নালার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, জুলাই মাসে হিজলগাড়ী বাজারে অবস্থিত বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স আকবর আলী সার বরাদ্ধ পেয়েছে ইউরিয়া ১২৬ মেট্রিক টন, টিএসপি ২৬ দশমিক ৮ মেট্রিক টন, ডিএপি ১১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন ও এমওপি ৬ দশমিক ১০ মেট্রিক টন, এবং বিবিএস এগ্রোকে ইউরিয়া ১২৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ২৬ দশমিক ৮ মেট্রিক টন, ডিএপি ১১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন ও এমওপি ৬ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় নগন্য। এছাড়াও বিএডিসি’র সার ডিলার আছে আকন্দবাড়িয়ার কামরুল ইসলাম, বেগমপুরের শিফিকুল ইসলাম, উজলপুরের নজরুল ইসলাম ও দোস্ত বাজারের সাইফুল ইসলাম। তাদের বরাদ্ধের সারও কুলাচ্ছে না। সার ডিলার আকবর আলী বলেন, আমার বরাদ্ধের সার কৃষি অফিসারের উপস্থিতিতে চাষিদের মাঝে বণ্ঠন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেকা হচ্ছে। চাষিদের চাহিদা মত সার দেবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, উপজেলা ভিত্তিক সমহারে সার বণ্ঠন করা হয়। এখন আষাঢ় মাস সার বেশি লাগার কথা না। তার পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে যে সব ইউনিয়নে সারের চাহিদা কম সেখান সার চাহিদার জায়গায় দেবার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সার প্রয়গের ক্ষেত্রে চাষিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যায়। চাষিরা মনে করে বেশি সার মানে বেশি ফলন। এধারনাটা ঠিক না। জমিতে সার প্রয়োগ এবং তা থেকে খাদ্য উৎপাদনের একটি মেয়াদ থাকে। চাষিরা সেটা বুঝতে চাই না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকার কুমড়া চাষিদের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More