চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে টানা বৃষ্টি : থাকবে আরও ৫ দিন ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা : দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতিও

স্টাফ রিপোর্টার: গত কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতিও। ভোগান্তিতে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদফতর জানালো দুঃসংবাদ। ভারী বৃষ্টিপাত আগামী পাঁচ দিনও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সাগরে লঘুচাপ এবং মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দেশে গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বান্দারবানে ২৭১ মিলিমিটার। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬২ মিলিমিটার। ঢাকায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ৮০ মিলিমিটার। দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ডিমলায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি এবং ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ বাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আগামী কয়েক দিনের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আগামী শুক্রবার ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আগামী শনিবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী রোববার খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় সংস্থাটি।
নাটুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা ও আশপাশের গ্রামে দিনভর বিরতিহীন বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে গ্রামের বিভিন্ন সড়ক ও চলাচলের পথ কাদায় একাকার হয়ে গেছে। গৃহপালিত পশু খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। ফলে ঘাসপাতা সংগ্রহ করতেও বৃষ্টির মধ্যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই ভেজা শরীরে দূরদূরান্তে ঘাস কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। বেসরকারি চাকরিজীবী শাহিন ও ইমরান হাসান বলেন, দিনভর বৃষ্টিতে অফিসে যেতে দেরি হচ্ছে। এখন বেলা ১১টা বাজলেও কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। এতে করে কাজেরও ব্যাঘাত ঘটছে। চন্দ্রবাস দিল্লি পাড়ার শরিফ ও লাভলু জানান,বৃষ্টির পানিতে অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ মিলে কষ্ট লাঘবের জন্য ইট দিয়ে হেঁটে চলার ব্যবস্থা করছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও সমস্যায় পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, যেসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে পানিবদ্ধ হয়ে আছে সে সব স্থানে পানি নিস্কাশন ও সংস্কার ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছি।
হাসাদাহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ বাজার থেকে মহেশপুরগামী সড়কটির সংস্কার কাজ ধীরগতি হওয়ায় যাতায়াতে হাজার-হাজার মানুষ জনদুর্ভোগে পড়েছে। বিশেষ করে এই বর্ষায় সড়কটির সালামের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় ছোট বড় প্রচুর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও খানাখন্দ আবার দেড় থেকে দুই ফুট গভীর গর্তের কারণের চলাচল চরম ভুগান্তি হচ্ছে পথচারীদের।
সরজমিনে দেখা গেছে, হাসাদাহ বাজার হতে মহেশপুর উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত¬¬ ১ কিঃমি পিচরাস্তাটি দীর্ঘদিন পর ঠিকাদারির মাধ্যমে সংস্কার করা হচ্ছে। ঠিকাদারি মহেশপুর উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রাম থেকে হাসাদাহ বাজারের অভিমুখী মৃত সালামের বাড়ী পযর্ন্ত ইটের সুড়কি রোলার দিয়ে পিসিয়ে রেখেছে। মৃত সালামের বাড়ী থেকে হাসাদাহ বাজার পর্যন্ত সংস্কারের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। ফলে এ রাস্তাদিয়ে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গাচোরা আর খানাখন্দের ভরা সড়কটি এখন যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে এ রাস্তাদিয়ে ছোট-বড় গাড়িঘোড়া ও স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পেতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, হাসাদাহ বাজার থেকে মহেশপুর সড়কটি বেশকিছুদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছিলো। রাস্তাটি সংস্কার হচ্ছে ধীরগতিতে তাও আবার খানিকটা রেখে কাজ করছে ঠিকাদারিরা। আলম বলেন, গত ১৫ বছর আগে নতুন পিচরাস্তা করা হয়। সড়কটি আর মেরামত করা হয়নি। আমাদের বাড়ীর সামনে হতে বাজার পর্যন্ত ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দে ভোরে গেছে। বাজারের চাউল ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বলেন,হাসাদাহ বাজার থেকে মৃত সালামের বাড়ী পর্যন্ত সংস্কার না হওয়ায় চরম ভুগান্তিতে পড়েছে মানুষ। হাসাদাহ হয়ে মহেশপুর এবং চৌগাছা হয়ে যশোর শহরে চলাচলের এটাই সহজ পথ। এ কারনে সময় ও খরজ বাঁচাতে অধিকাংশ চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষ এই পথে বেশি চলাচল করেন। এবং ওই অঞ্চলের মানুষজন এ রাস্তাদিয়ে চলাচল করে থাকে। তিনি আরো বলেন, মহেশপুর উপজেলার কানাইডাঙ্গা হতে হাসাদাহ অভিমুখী মৃত সালামের বাড়ী পর্যন্ত সংস্কারে কাজটি ধীরগতি হওয়ায় কারণে আরো বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বর্তমান ভারী বৃষ্টি হওয়ার কাজ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি কম হলে হাসাদাহ বাজার থেকে মৃত সালামের বাড়ী পর্যন্ত অসম্পূর্ণ কাজটি দ্রুত সম্পূর্ণ করার দাবি জানানো হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More