ভরা মরসুমে চুয়াডাঙ্গায় ইলিশের দেখা নেই দু-এক কার্টুন আসলেও দাম নাগালের বাইরে : ক্ষুব্ধ ক্রেতারা

স্টাফ রিপোর্টার: ভরা মরসুমে চুয়াডাঙ্গায় ইলিশ মাছের দেখা নেই। বেশিরভাগ আড়ত ও হাট বাজারে মোকাম থেকে ইলিশ মাছ আসছে না। দুই এক কার্টুন আসলেও দাম নাগালের বাইরে। কয়েকজন আসাধু আড়তদার ও ফরিয়া নতুনের সাথে পুরাতন ইলিশ মাছ মিশিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে। বেশি দামে মাছ কিনে ইলিশের স্বাদ না পেয়ে ক্ষুদ্ধ অনেক ক্রেতা। তারা স্টেশন সংলগ্ন মৎস্য আড়তের এক ব্যবসায়ীকে দুষছেন। তিনি কয়েক মাস আগের কোল্ড স্টোরের ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করেন চড়া দামে। তবে বরিশাল ও পটুয়াখালির বিভিন্ন মোকামেই চড়া দামে ইলিশ বেচা-কেনা হচ্ছে। দাম অতিরিক্ত বেশি হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার আড়তদাররা ইলিশ মাছ আনছেন না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ৬/৭শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আড়াইশ থেকে তিনশ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা কেজি দরে মোকামে বিক্রি হচ্ছে। জাতীয় মাছ রুপালি ইলিশ। মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু বাঙালি ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছে। একদিকে ইলিশের যেমন সরবরাহ নেই, অপরদিকে দাম আকাশ ছোয়া। এ কারণে ইলিশ দিয়ে মেহমানদারি করা এখন অলৌকিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ কারণে কিছু আড়তদার ও ফরিয়া বেশি দামে ইলিশ মাছ বিক্রি করে প্রচুর অর্থের মালিক বনে যাচ্ছে। চড়ামূল্যে ইলিশ কিনে অনেকেই হচ্ছেন প্রতারিত। এসব পুরাতন ইলিশের কোনো স্বাদ বা গন্ধ নেই। প্রতারণার স্বীকার চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, গত বুধবার বড় বাজার মাছপট্টি থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকা কেজি দরে ৯শ’ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ কিনলাম। রান্নার পর এটা খাওয়া যায়নি। এর কোনো স্বাদ বা গন্ধ নেই। তিনি বলেন হয়তো লবন মিশিয়ে রেখে দেয়া পুরাতন মাছ বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এটা এক ধরনের প্রতারণা। তিনি এই ধরনের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। স্টেশন সংলগ্ন মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাহিদ হাসান ফিরোজ বলেন, সাগর উত্তাল থাকার কারণে ঘাটে মাছ কম ধরা পড়ছে। মোকামে ঝাটকা ইলিশ এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা কেজি দরে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমাদের এখানে ৩০/৩৫টি মাছের আড়ত রয়েছে। বর্তমানে হাতে গোনা ১-২ জন আড়তদার ইলিশ নিয়ে আসছে। এর মধ্যে কিছু টাটকা ইলিশ আবার কিছু কোল্ড স্টোরের ইলিশ। মেসার্স বাংলাদেশ ফিস ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটার মো. ওহিদুল ইসলাম বিশ^াসসহ দুই এক আড়তদার বর্তমানে ইলিশ মাছ বিক্রি করছেন। কয়েকজন ফরিয়া জানান, তিনি একচেটিয়া ইলিশ বিক্রি করেন। অন্য কেউ ইলিশ বিক্রি না করায় তিনি দাম ও অনেক বেশি নেন। আমরা বেশি দামে কিনলে, খরিদদারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এছাড়াও তিনি কোল্ড স্টোরের ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করেন। কোল্ড স্টোরের মাছ পুরাতন, এই ইলিশের কোনো স্বাদ নেই। তারা আরও বলেন, বর্তমানে বাগদা ও গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। এসব চিংড়ি মাছে ওজন বাড়ানোর জন্য একধরনের জেলি দেয়া হচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। এর বাইরে ড্রামে করে নিয়ে আসা কই মাছে ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, মৎস্য বিভাগ, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর দেখবেন এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য অফিসার আবুল কালাম আজাদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মামুনুল হক বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More