অ্যাকশনে বিএনপি: নজরদারিতে সব পর্যায়ের নেতারা

স্টাফ রিপোর্টার: শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে বিএনপি। কেন্দ্রের সিনিয়র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়া মাত্রই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে সারা দেশে। দলের ভেতরে থেকেই শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। অপরাধ করলে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। যত বড়ই সিনিয়র নেতা হোক না কেন ছাড় দেবে না দল। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এমন কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। ইতিমধ্যে সারা দেশে দল এবং এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের চার থেকে সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। ওদিকে, সম্প্রতি দেশে সংগঠিত হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা দেখছে। মিটফোর্ডের ঘটনাটিকে ঘিরে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাদের ভাষ্য, সরকারকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া উচিত। পুলিশ অপরাধ দমনে কাজ করছে না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা কাজ করবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সবচেয়ে নির্যাতিত হয়েছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। লাখো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুম এবং খুনেরও শিকার হয়েছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। ৫ই আগস্টের পর সম্প্রতি বিএনপি’র বিরুদ্ধে নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। পুরান ঢাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীকে হত্যা ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অপরাধ প্রমাণিত হলেই আমরা বহিষ্কার করছি। ভবিষ্যতেও এটা অব্যাহত থাকবে। রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীকে হত্যাসহ দেশের সম্প্রতি সংগঠিত ঘটনাগুলোর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও মনে করছেন ড. খন্দকার মোশাররফ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি’র কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর বিএনপি তো এখন রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বে নেই। সেখানে এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে তাদের (সরকার) গাফিলতি রয়েছে। ওদিকে, গণ-অভ্যুত্থানে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করলেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বিএনপি। দখল, টেন্ডার, লুটপাট ও চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দেবে না। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি মামলা এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাবে দলটি। অন্যদিকে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা-মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করবে জাতীয়তাবাদী যুবদল। কেন্দ্রীয়ভাবে এদিন বেলা ২টায় নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হবে। এ ছাড়া সারা দেশে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইল-শান্তিনগর-মালিবাগ মোড়-মৌচাক-মগবাজার-বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। একইদিন সারা দেশের সকল মহানগর ও জেলা শহরে কর্মসূচি করবে সংগঠনটি। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করবে সংগঠনটি। একসঙ্গে সারা দেশের সকল জেলা এবং মহানগরেও এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। কিছু কিছু নেতাকর্মীর কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার দায়িত্ব সরকারের। বিএনপি তো এখন সরকারের দায়িত্বে নেই। এরপরও আমরা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া উচিত। এরপরও পুলিশের যারা কাজ করবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কার নির্দেশে এসব হচ্ছে, এটা সরকারকে পরিষ্কার করা উচিত। সরকারের ওপর চাপ থাকলে, সেটা বলুক। বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More