সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক ঐক্য জরুরি

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে বা ঘটনার সুযোগ নিয়ে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, যে বিষয়ে সবারই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ধরনের তৎপরতার সর্বশেষ উদাহরণ-উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ফায়দা লোটার চেষ্টা। ওই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে চালানো হচ্ছে নানা ধরনের অপপ্রচার। তারা কোমলমতি শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষকে উসকে দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেখানেও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা ঢুকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার সেøাগান দেন। এর আগে ‘টুঙ্গিপাড়ায় কবর ভাঙা হবে’-এমন অপপ্রচার চালিয়ে গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষকে উসকে দিয়ে সহিংসতা ঘটিয়েছে দলটি। এছাড়া বেশকিছু জেলায় বিক্ষোভ এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত শক্তির ইন্ধন থাকার তথ্য রয়েছে। বস্তুত গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি বলে বিবেচিত বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্প্রতি যে অনৈক্য লক্ষ করা যাচ্ছে, এ সুযোগটিকেই কাজে লাগাচ্ছে ক্ষমতাচ্যুতরা। এটি সবার জন্যই একটি সতর্কবার্তা। যা হলো, বিভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে পরাজিত শক্তি বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে বা নাশকতা চালাতে পারে। দেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এখনো সর্বত্র স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। নানা কারণে বিরাজ করছে অস্থিরতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থায় কোনো অশুভ শক্তি যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ফায়দা নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে দেশবাসীর বহু কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। কাজেই নির্বাচনের আগে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যাতে দেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিত সে ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা। প্রকৃতপক্ষে দেশে কেউ যাতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সবচেয়ে বেশি যা জরুরি তা হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার ঐক্য আরও দৃশ্যমান করার কথা বলেছেন। আমরাও মনে করি, গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিলো, তা আবার ফিরিয়ে আনা দরকার। এ লক্ষ্যে দলীয় নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরিহার করতে হবে। জাতীয় ইস্যুগুলোতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে বিষয়ে সবাইকে ঐকমত্যে আসতে হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাচ্যুতদের অপতৎপরতা ও অন্যান্য সংকট অনেকাংশে দূর হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত এটা অনুধাবন করে সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হবে, এটাই কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More