আলমডাঙ্গায় সাপের কামড়ে শ্রমিক সুরুজের মৃত্যু ঝাড়ফুঁকের অন্ধ বিশ্বাসে তিন কন্যাসহ স্ত্রী অথৈ সাগরে

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর গ্রামের দরিদ্র রাইসমিল শ্রমিক সুরুজ আলী (৩৫) এখন শুধুই স্মৃতি। বিষধর সাপের কামড় আর সমাজের অন্ধবিশ্বাস তাকে কেড়ে নিয়েছে পরিবার থেকে। তিনটি ফুটফুটে মেয়েশিশু আর এক অসহায় স্ত্রীকে রেখে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি চলে গেলেন—যার ক্ষতি আর কোনোদিন পূরণ হবে না। সুরুজ আলী আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছোট ছেলে। সংসার চালাতে স্থানীয় শহিদুল ইসলামের রাইসমিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কর্মঠ মানুষটি মিলের মালামাল পাহারা দিতে গিয়ে সাপের ছোবলে মৃত্যুর মুখে পতিত হন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে মিল ঘরে ঘুমিয়ে পড়লে লুঙ্গির ভিতর ঢুকে একটি বিষধর সাপ তার উরুতে কামড় দেয়। বাড়ি ফিরে বিষয়টি জানালেও পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে না নিয়ে প্রথমে স্থানীয় কবিরাজ নবী ফকিরের কাছে নিয়ে যান। তিনি ঝাড়ফুঁক করে বলেন, “এ ধোঁড়া সাপের কামড়, এখন আর বিষ নেই, এখন বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়লে সব ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু ভাগ্য খারাপ, ঠিক হয়নি কিছুমাত্র। ভোর হতেই সূরুজ আলীর অবস্থার অবনতি ঘটে। তখনও তাঁকে আধুনিক চিকিৎসা না দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আরেক কবিরাজ সাত্তার ফকিরের কাছে। সাত্তার ফকিরও শেষমেশ হাত তুলে নেন। এরপর বিকেল ৫টার দিকে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দেরিতে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হলেও তখন সবকিছু অনেক দেরি হয়ে গেছে। অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় চিকিৎসকরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু রাজশাহী পৌঁছানোর আগেই, নাটোরে পৌঁছে তার নিথর দেহ যেন বলে দিলো বাঁচার সব রাস্তা শেষ। আজ তার বাপ-মার জীবনে এক অসীম শূন্যতা, স্ত্রীর চোখে শুধু পানি, আর বুকে অনন্ত শূন্যতা। কাঁধে তিনটি মেয়েশিশুর ভবিষ্যতের ভার। কে ভরসা তাদের এখন? গ্রামের সচেতন মানুষজন বলছেন—”যদি শুরুতেই হাসপাতালে নেয়া হতো, হয়তো সূরুজ আজ বেঁচে থাকতেন। অন্ধবিশ্বাস, কবিরাজি আর ঝাড়ফুঁকের ভন্ডামি এই অমানবিক প্রভাব কত বড় সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে-এ ঘটনা তার জ্যান্ত প্রমাণ।” এ মৃত্যু শুধু একজন মানুষের নয়-এ মৃত্যু এক পরিবারের স্বপ্নের, এক ভবিষ্যতের। আমাদের সমাজে এখনো অজ্ঞতা আর কুসংস্কারের শেকড় কত গভীরে, সূরুজ আলীর মৃত্যু যেন তারই এক নির্মম প্রতিচ্ছবি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More