হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ায় শুরু হয় একের পর এক হামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে জমজমাট ক্যাম্পাস। বিভিন্ন সংগঠনের প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর মধুর ক্যান্টিন। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় এসেছে ২০২৯ সালের সবশেষ নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী নানা ঘটনা।

সেবার ডাকসুতে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীণ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর। বেশিরভাগ পদে ছাত্রলীগকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। ওই সংসদে শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব উঠে। এতে ভেটো দেন ছাত্রঅধিকার পরিষদের দুই প্রতিনিধি নুরুল হক নুর ও আখতার হোসেন। হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবটি করেছিলেন শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তিনি এবার ডাকসুর ভিপি পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। হাসিনাকে আজীবন সদস্য দেখতে চাওয়া ইমির ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। যিনি সবশেষ ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

রাশেদ খান লেখেন- ডাকসুতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো, শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করতে হবে। সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়ার আগে আমরা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিলাম হাসিনাকে আজীবন সদস্য করা যাবে না।

মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে নুরুল হক নুর ও আখতার হোসেন শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রশ্নে ভেটো দিলো। শেখ হাসিনার এই ‘অসম্মান’ শেখ হাসিনা ও তার ছাত্রলীগের সন্তানেরা মানতে পারেনি। প্রতিশোধ নিতে করেছে একেরপর এক হামলা!

২০১৯ সালের ডাকসু মূলত ছাত্রলীগের প্যানেল দখল করেছিল। ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে আমরা ভিপি,জিএসসহ কেন্দ্রীয় সংসদে ১১ টি পদে জয়ী হই। কিন্তু ছাত্রলীগ ফলাফল ছিনতাই করে। তারপরও যে দুটো পদ ঘোষিত হয়, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে।

২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনার পতনের বীজ বপন হয়।সেখান থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিক ছাত্র রাজনীতি শুরু। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত তারাই এই প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিকে গণঅভ্যুত্থান উপহার দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে শামসুন্নাহার হলের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। সেবার স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার সেই ইমি বাম গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট থেকে ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভিপি পদে।

তবে এবার ইমির একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৯ সালে ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর ইমি এক টক শোতে জানিয়েছিলেন পতিত স্বৈরাচার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন ডাকসু সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা।

সেবার এই প্রস্তাব উত্থিত হওয়ার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন তৎকালীন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। তবে ইমি নুরের বিরোধিতা করে সায় দিয়েছিলেন হাসিনার আজীবন সদস্য হওয়ার পক্ষে।

একটি বেসরকারি টিভির টক শোতে এ বিষয়ে কথা বলেন ইমি। সেখানে তিনি ছাড়াও হাজির ছিলেন নুরুল হক নুর ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।

ইমি সেখানে বলেন, ‘আমার হলে যেহেতু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কয়েক জায়গায় হয়নি এটি আমাকে মানতে হবে, কিন্তু যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন, এবং তাকে যেহেতু আন্তরিক দেখেছি আমরা, ডাকসু নির্বাচনটি যেহেতু সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে, তার আন্তরিকতা ছাড়া কিন্তু এটা সম্ভব ছিল না। তিনি আমাদের গণভবনে ডেকে যে আতিথেয়তা দিয়েছেন, অন্তত কৃতজ্ঞতাবশত হলেও তাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য ঘোষণা করা উচিত।’

পরে সে বছরের ৩০ মে ডাকসুর দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী সভায় হাসিনাকে আজীবন সদস্য ঘোষণা করা হয়। যে বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে অবশ্য ভিপি নুরের স্বাক্ষর ছিল না। এই সিদ্ধান্তে সমর্থন ছিল না তৎকালীন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ও বর্তমানে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনেরও।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More