আসন্ন বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন উপলক্ষে দেশ ও বিদেশে ভ্রমণের সব আয়োজনে শুরু হতে যাচ্ছে ১২তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার (এটিএফ)। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে মেলা চলবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তিন দিনব্যাপী এ মেলায় দেশ ও বিদেশের পর্যটন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সরকারি পর্যটন সংস্থা ও ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।
সোমবার সকালে ‘ক্রাউন প্লাজা ঢাকা গুলশান’-এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক এবং এটিএফ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়মা শাহীন সুলতানা। মেলার পার্টনার কান্ট্রি ফিলিপাইনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন লিন আর গুতেররেজ, মালদ্বীপের পক্ষে আলী শাহ, টাইটেল স্পন্সর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) মোহাম্মদ সামসুল করিম, এটিএফের উপদেষ্টা খবির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পক্ষে উপপরিচালক নাজিম উদ্দিন ও এটিজেএফবির সভাপতি তানজিম আনোয়ার।
এছাড়াও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. জিয়াউল হক হাওলাদার।
মহিউদ্দিন হেলাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশ ও বিদেশে ভ্রমণের সব আয়োজনে ‘এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার’ অনন্য ভূমিকা পালন করবে। পর্যটন শিল্পের সব গন্তব্যসহ হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ, এয়ারলাইন্স, থিমপার্ক, ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্টসহ সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলা সরকারি-বেসরাকারি উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন গন্তব্যসমূহকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আগামী ১৮-২০ সেপ্টেম্বর তিনদিন ব্যাপী এ মেলা ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হবে। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এনডোর্সে, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশ’র সার্বিক সহযোগিতায় এ মেলা হচ্ছে। আসন্ন পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে মেলায় থাকবে দেশ ও বিদেশ ভ্রমণে নানাবিধ প্যাকেজ অফার। মেলায় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিটুবি সেশন, ডেস্টিনেশন ও প্রোডাক্ট প্রেজেন্টেশন, প্যানেল ডিসকাশনসহ নানাবিধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এবারের মেলার অংশ হিসেবে একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ ট্যুরিজম ইনভেস্টমেন্ট শোকেজ’। পর্যটন শিল্পে আসন্ন প্রকল্প সমূহের প্রদর্শনী ও স্থানীয় ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ মেলার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে।
মেলায় দুটি হলের ১৮০টি বুথে দেশ ও বিদেশের পর্যটন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সরকারি পর্যটন সংস্থা ও ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন জানিয়ে এটিএফ চেয়ারম্যান বলেন, মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। মেলার পাশাপাশি ট্যুরিজমের বিভিন্ন সেমিনার, বিটুবি সেশন, প্রোডাক্ট প্রোমোশন, ডেস্টিনেশন প্রেজেন্টেশনসহ সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ের আয়োজন থাকবে। এবারের মেলায় দেশের উল্লেখযোগ্য হোটেল, রিসোর্টসমূহ বাংলাদেশের লাক্সারি পর্যটন সেবা উপস্থাপন করবে; যার মাধ্যমে শুধু ব্যবসায়িক আদান-প্রদান নয়, পর্যটন শিল্পে আমাদের লাক্সারি সেবাও একই ছাদের নিচে উপস্থাপনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে আমাদের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা ইঙ্গিত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার মেলার টাইটেল স্পন্সর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, প্রাইম পার্টনার কান্ট্রি- নেপাল ও পার্টনার কান্ট্রি ফিলিপাইন ও মালদ্বীপ। হোস্ট কান্ট্রি বিউটিফুল বাংলাদেশ, হসপিটালিটি পার্টনার ‘ক্রাউন প্লাজা ঢাকা গুলশান’, ট্রান্সপোর্ট পার্টনার ‘কনভয় সার্ভিস’, আইসিটি পার্টনার ‘এম৩৬০’। মেলার অফিসিয়াল পাবলিকেশন দ্য ট্রাভেল বাউন্ড। ক্রুজ পার্টনার ‘ঢাকা ডিনার ক্রুজ’।
এছাড়া মেলায় বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে; যার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দর্শনার্থীদের মাঝে তুলে ধরার প্রচেষ্টা থাকবে।
মেলার প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকবে এয়ারলাইন্স টিকিটসহ বেড়ানোর আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার। তবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করলে এন্ট্রি ফি সম্পূর্ণ ফ্রি।
সংবাদ সম্মেলনে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়মা শাহীন সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য বিভিন্ন ফেয়ার-ফেস্টিভাল, ইভেন্ট, কনফারেন্স এবং ফুড ফেস্টিভাল আয়োজন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সব সময় সমাদৃত হয়ে আসছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট যে কোনো ফেয়ার-ফেস্টিভাল এবং উৎসব পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যাগাজিন ‘পর্যটন বিচিত্রা’ আয়োজন করতে যাচ্ছে ১২তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। এ মেলাটিকে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গুরুত্বসহকারে দেখছে।
মেলায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ট্যরিজম বোর্ড অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য দেশের পর্যটন গন্তব্যগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সুবিধাদি নির্মাণসহ নিরবচ্ছিন্ন জোরালো প্রচার-প্রচারণা ও বিপণনের প্রয়োজন। এজন্য দরকার যথাযথ ও সমন্বিত পদক্ষেপ। পাশাপাশি দেশে টেকসই পর্যটন উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশের পর্যটন উন্নয়নে অবকাঠামোগত সুবিধাদি নির্মাণের পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে দেশে-বিদেশে জোরালো প্রচার-প্রচরণা এবং বিপণন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বেশ আন্তরিক। আমাদের অনেক ইউনিক বা অনুপম আকর্ষণ রয়েছে। শুধুমাত্র যথাযথ বিপণন কৌশলের অভাবে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সেই কাজটিই করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে এটিএফ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণের একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.