দীর্ঘ দুই যুগের সংগীত জীবনের ক্যারিয়ারে ইতি টানলেন তাহসান খান। জনপ্রিয় এ সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা জানিয়েছেন, এরপর আর কোনো কনসার্টে দেখা যাবে না তাকে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে জনপ্রিয় এ তারকার অনুসারীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি, ইনস্টাগ্রামে ৩৫ লাখের বেশি। কিন্তু হঠাৎই দেখা যাচ্ছে, তার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট নেই। বন্ধ রয়েছে দুটি অ্যাকাউন্টই। এ নিয়ে তিনি ভক্তদের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।
এর মাঝেই অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত এক কনসার্টে ভক্ত–শ্রোতারা পেলেন সেই অপ্রত্যাশিত খবর। রোববার গান গাইতে গাইতেই হঠাৎ মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিলেন, ‘অনেক জায়গায় লেখা হচ্ছে, এটা আমার শেষ কনসার্ট। আসলে শেষ কনসার্ট না, শেষ ট্যুর। আস্তে আস্তে সংগীতজীবনের হয়তো ইতি টানব। এটা ন্যাচারাল। সারাজীবন কি এভাবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে লাফালাফি করা যায়! মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, এখন যদি মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাই—“দূরে তুমি দাঁড়িয়ে”—দেখতে কেমন লাগে।’
এই ঘোষণা শুনে উপস্থিত দর্শকেরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। হলজুড়ে শোনা যায় একসঙ্গে না–না ধ্বনি। অনেকেই তখনই চোখের পানি মুছতে থাকেন। কিন্তু তাহসান নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে গান চালিয়ে যান।
এর কারণ হিসেবে সোমবার দুপুরে তাহসান একটি গণমাধ্যমকে এক বাক্যে বলেন, ‘একটা সাধারণ জীবনের আশায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তাহসান তার পেশাদার সংগীতে ২৫ বছর পার করছেন। এই রজতজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে রয়েছেন। ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড ও সিডনির কনসার্টগুলোতে হাজারো দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তিনি। দর্শক–শ্রোতাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গেয়েছেন তার গাওয়া জনপ্রিয় সব গান। প্রতিটি শহরে দর্শকদের ভিড় প্রমাণ করেছে, তাহসানের জনপ্রিয়তা এখনো অটুট।
কিন্তু মেলবোর্নের কনসার্টে আনন্দের পাশাপাশি এই বিদায়ী ঘোষণা ভক্তদের মন ভারি করে দিয়েছে। যদিও এরপর পার্থে তার শেষ কনসার্ট রয়েছে। তবে তার পরই তিনি ধীরে ধীরে সরে দাঁড়াবেন বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তাহসান বহুবার বলেছেন, ‘তার কাছে মিউজিক সব সময় আবেগের জায়গা। তবে বয়স, সময় ও জীবনের অগ্রাধিকার তাকে নতুন করে ভাবিয়েছে। মেয়ের বড় হয়ে ওঠা তার জীবনের বড় প্রভাব ফেলেছে। মঞ্চে লাফিয়ে গান গাওয়া আর তার কাছে আগের মতো স্বাভাবিক মনে হয় না। শিল্পী হিসেবে নয়, একজন বাবা হিসেবে তার দায়িত্বও বেড়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরে দাঁড়ানো এবং জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত—দুটিই যেন ইঙ্গিত করছে, তাহসান এখন নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে প্রাধান্য দিতে চান।
একটা সময় বাংলা রক গানে জোয়ার এনেছিল ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’। ১৯৯৮ সালে তিন বন্ধু জন কবির, জাহান ও টনির হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় এ ব্যান্ডের। পরে এই ব্যান্ডে যোগ দেন তাহসান ও মিরাজ। ২০০২ সালে বাজারে আসে ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম ‘আমার পৃথিবী’। অ্যালবামের গানগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে দেশের তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে।
তাহসানের এই ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। অনেকে লিখেছেন, ‘আমরা প্রস্তুত নই তাকে বিদায় জানানোর জন্য।’
কেউ কেউ আবার আশা প্রকাশ করেছেন, কিছুদিন বিরতি নিয়ে তিনি আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু তাহসান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গানে ফেরার সম্ভাবনা নেই।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.